এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চায় নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই লক্ষ্যেই এবার দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়াতে বাধা দেয়নি ক্ষমতাসীন দল।
ভোটের আগে জাতির উদ্দেশে দেয়া সিইসির ভাষণেও ছিল কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান।
ভোটের প্রচারে বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশবাসীর প্রতি আহবান ছিল ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার।
গত ১০ দিন ধরে ভোট বর্জনের জন্য সারাদেশে প্রচার চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। সে নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানিয়েছিলো ইসি। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব দল অংশ নেয়। সেবার ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিলো বলে জানায় ইসি।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সারা দেশে মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ২৪টি। এর মধ্যে ২৩ হাজার ১৩৩টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকেই।
এছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ সহিংসতা রোধে প্রতিটি এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করেছে কমিশন। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট আইনের আওতায় প্রতিটি উপজেলা ও জেলা সদরের পৌরসভায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন।
এর বাইরে ঢাকায় ২৬ জন, চট্টগ্রামে ১০, খুলনায় ৬, গাজীপুরে ৪ ও অন্য সিটিতে তিনজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ৫-৯ জানুয়ারি ৩০০ আসনে ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন, যারা নির্বাচন উপলক্ষে সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলে নেয়া ও তা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার সম্পন্ন করবেন।
ভোটগ্রহণের দিন ছাড়াও এর আগের ও পরের দুই দিন করে এসব ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন, যার মূল উদ্দেশ্যে হলো ভোটকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের সহিংসতা যেন না হতে পারে।
আর ভোটের দিনে মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্র অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশ ও ১২ জন আনসার কাজ করবেন।
এর বাইরের এলাকায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ দু’জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য কাজ করবেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে একজন করে সশস্ত্র পুলিশ বেশী থাকবে।
মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স
ইসির তথ্য অনুযায়ী, ভোটকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ৩৮ হাজার ১৫৪ জন সেনা সদস্য এবং ২ হাজার ৮২৭ নৌ বাহিনী সদস্য নিয়োজিত থাকছে যারা একজন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য গত ৩ জানুয়ারিই নির্বাচনি এলাকাগুলোতে পৌঁছে গেছে।
বিজিবি বা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ৪৪ হাজার ১৯২ জন, কোস্টগার্ডের ২ হাজার ৩৫৫ জন, র্যাবের ৬০০ টিম, পুলিশের ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭জন ও আনসার ব্যাটালিয়নের মোট ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপি নির্বাচন ঘিরে কিছু যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যা শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
পাশাপাশি শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক ছাড়াও জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন যেমন ওষুধ, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা এবং এ ধরনের কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
জাগরণ/দ্বাদশজাতীয়সংসদনির্বাচন/এসএসকে/এমএ