• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৮:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১২, ২০১৯, ১২:২৫ পিএম

ঢাবির এক শিক্ষকের ধৃষ্টতার প্রতি আমার সমর্থন 

ঢাবির এক শিক্ষকের ধৃষ্টতার প্রতি আমার সমর্থন 
লেখক লুৎফর রহমান রিটন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আপনি একজন সামান্য শিক্ষক। হ্যাঁ সামান্য। খুবই সামান্য। মাস গেলে মাইনে পান। আপনার নিয়োগদাতা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আপনি একজন খুব সামান্য কর্মচারী মাত্র। আপনি তাদের দাস। আগ বাড়িয়ে জনস্বার্থ দেখা আপনার কাজ নয়। 

বাজারের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির (মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো) সাত ধরনের পাস্তুরিত দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিন ধরনের দুধে ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আপনি। 

গণমাধ্যম জানাচ্ছে—‘‘গত ২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বায়োমেডিকেল সেন্টারের পরিচালক এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, এ গবেষণার জন্য বাজার থেকে পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এগুলো হলো- মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো। আর অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে। গবেষণায় এমন তথ্য প্রকাশ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক আ. ব. ম. ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।’’
অতঃপর শুরু হয়ে গেলো খেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য একজন গবেষক-কর্মচারীকে ধৃষ্টতার উপযুক্ত শিক্ষা দিতে এগিয়ে এসেছে আমলাতন্ত্র—‘‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন বলেন, ‘পিআর রিভিউস জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই ওই গবেষক তার তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কিন্তু তার গবেষণার স্যাম্পল সঠিক ছিল না। গবেষণাতেও ত্রুটি ছিল।...আগামী সাত দিনের মধ্যে সন্তোষজনক কোনো জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক আ. ব. ম. ফারুক

এবার আপনি কোথায় যাবেন জনাব? 
আপনার বিভাগের চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে তার মস্তকটি বন্ধক বা জমা দিয়ে এসেছেন আমলাতন্ত্রের ড্রয়ারে। এই যে তার নমুনা—“গবেষকদের সংবাদ সম্মেলনের তিন দিন পর ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাশার জানান, ওই গবেষণার সঙ্গে ফার্মেসি বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি গবেষণাটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।” 

তারপরও খাদ্যে ভেজাল নিয়ে আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। 
দুই পা পিছিয়ে এসেও স্বভাবসুলভ দেশপ্রেম আর দায়িত্ববোধের কারণে আপনি বলে ফেললেন—“আমরা যে ফলাফল দিয়েছি, তা নমুনার ফলাফল। তার মানে এই নয় যে, ওই সব কোম্পানির সব পণ্যই এ রকম।( হাহ্ হাহ্ হাহ্। যা বোঝার আমরা বুঝে নিয়েছি জনাব। আপনাকে ঠেঁসে ধরা হয়েছে।)... ” ...তবে এভাবে যেখানে সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হলে আমরা কিন্তু থাকব না, মরে যাব। অ্যান্টিবায়োটিক যে গরুকে খাওয়ানো হলো, ওই গরুর দুধ ও মাংস আমরা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষকে বাঁচাতে এখনই গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে।”

জনাব অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, একদা আমিও ছাত্র ছিলাম আপনার প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আপনার মতো শিক্ষকেরা আছেন বলেই এখনো ভরসা হারাই না। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে আপনার আপসহীন জনবান্ধব সোচ্চার ভূমিকার কারণে দূর থেকে শ্রদ্ধা করি আপনাকে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়, আপনার বিভাগের লোভী স্বার্থপর এবং ভীতু সহকর্মীরা আপনাকে ত্যাগ করলেও জানবেন, দেশের সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন আর শুভ কামনা আপনার সঙ্গে আছে। 

আমি বিশ্বাস করি নষ্টদের নির্মিত কুয়াশার চাদর ভেদ করে সত্যের সূর্য উদিত হবেই হবে। নষ্টদের জয় সাময়িক, কিন্তু সত্যই সুন্দর। আপনি সেই সুন্দরের প্রতীক। 
দেশের এক অতিনগন্য লেখক- ছড়াকারের প্রণতি গ্রহণ করুন স্যার। আপনার জয় হোক।

বিএস