• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৫, ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম

কল্পলোকের গল্প

ভগবান যার সহায়

ভগবান যার সহায়

ভগবানচন্দ্র বণিক সেই যে কী এক কথা মাথায় ঢুকাইয়া দিল, তারপর হইতে গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মনে তোলপাড় চলিতেছে তো চলিতেছেই। কী যেন ‘কেট’ বলিয়াছিল, কিছুতেই মনে আনিতে পারিতেছে না। তবে ঐ কাজটি করিয়া ফেলিতে পারিলে পুরা কৃষ্ণনগরের ব্যবসাবাণিজ্য যে মুঠোর মধ্যে চলিয়া আসিতে পারে, সে ব্যাপারে গবুমন্ত্রীর আর অবিশ্বাস করার উপায় নাই। তখন আর সিংহাসন লইয়া উতলা হইবার প্রয়োজনও পড়িবে না। কিন্তু তারপরও কৃষ্ণনগর সিংহাসনের ব্যাপারে মাঝেমধ্যে বুকটা টন টন করিয়া ওঠে। বিশাল রাজপ্রাসাদ, কার্পেট মোড়া মেঝে, ঝলমল করা রাজদরবার, সিপাই-শান্ত্রী আর কী জাঁকজমক! তার পরিবর্তে হয়তো অঢেল টাকাপয়সা আসিবে কিন্তু সেই ঠাটবাট কোথায় পাওয়া যাইবে!


পরক্ষণেই আবার মনে হইল, এসবই তো মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সম্পত্তি! রাজা যদি না-ই হইতে পারে, তাহা হইলে তো সবই ফক্কা!


এই সময় মন্ত্রীর বাসভবনে আগমন ঘটিল তাহার বুদ্ধিদাতা বন্ধু ভগবান চন্দ্র বণিকের।

ভগবান—কী খবর বন্ধু গবুমন্ত্রী! কী করবে ঠিক করেছ!

—না, না, এখনো তো কিছু বুঝতেই পারছি না।

—কেন, তুমি তো তোমার অতি প্রিয় কটা-ঘটাকে কাজে লাগিয়েই দিয়েছ, ওরা নিশ্চয়ই একটা কিছু ব্যবস্থা করবেই। আর তা ছাড়া কৃষ্ণনগরের দুই বিখ্যাত সিঁধেল চোরকেও কাজে লাগিয়ে দিয়েছ গত সপ্তাহেই।

—তা তো করেছিই।

—তা ওরা ঐ গর্ত থেকে বেরোবে কবে? খবরটবর পেয়েছ?

—না, না, এত তাড়াতাড়ি কী হবে? কত লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়তে হবে আর কাজটাও তো করতে হবে খুবই সাবধানে। তবে আমার একটু সন্দেহ হচ্ছে বন্ধু, এটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে!

—কী সেটা গবুচন্দ্র?

—যারা সুড়ঙ্গ তৈরি করছে তাদের এক-একজন এক দিন পরপর এসে বলে, আরও এত টাকা দিতে হবে, অত টাকা দিতে হবে। বলো তো, এত নগদ টাকা পাব কী করে?

—তা তো ঠিক বলেছ, তোমার তো আবার অনেক খরচ সামনে আছে।

—যেমন? ও আচ্ছা, একটা কথা বারবার মনে করেও ভুলে যাই। তুমি যেন কী করার কথা বলেছিলে?

—কী বলেছিলাম?

—ঐ যে মিনিকেট, না ইন্ডিকেট— কী যেন! আমার তো ঐসব ইংরিজি-ফিংরিজি একেবারেই আসে না।

ভগবানচন্দ্র হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল এবং হাসিতে হাসিতে তাহার হেঁচকি উঠিতে শুরু করিল।

—এত হাসছ কেন ভাই ভগবানচন্দ্র! নাও একটু জল খাও, তারপর বলো, কী বলেছিলে সেদিন।

—না, না, আমি ঠিক আছি গবুচন্দ্র। মিনিকেট, ইন্ডিকেট বা সুটকেট কোনোটাই নয়। আমি বলেছি সিন্ডিকেটের কথা। তুমি আর আমি মিলে সিন্ডিকেট ব্যবসা করব, বুঝলে!

—হ্যাঁ, তারপর? তুমি মন্ত্রী হিসেবে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে এক-একটা পরামর্শ দেবে। যেমন ধরো— আলু, ডিম, মাংস, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, তরিতরকারি সবকিছুই তুমি মন্ত্রী হিসেবে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে পরামর্শ দিলে আর তোমার কিছু চেলাচামুণ্ডাকে সাজিয়ে এমন কিছু বিষয় রাজদরবারে হাজির করলে, যাতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মুগ্ধ হয়ে যান। তখন তোমার প্রকল্প পাস হয়ে যাবে, মহারাজ সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবেন আর তারপর থেকে চালু হয়ে যাবে আমাদের সিন্ডিকেট। মাঝেমধ্যে আমি ছদ্মবেশ নিয়ে সন্ন্যাসী বেশ ধরে রাজসভায় যাব, যেন তুমি আমাকে হিমালয় থেকে খবর দিয়ে এনেছ আর আমি সেই সুযোগ নিয়ে নানারকম অংবংচং বুঝিয়ে সিন্ডিকেটটার কাজকর্ম চালু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।

—এ কী ভগবান! তোমার এত বুদ্ধি! আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি!

—তবে আর বলছি কি গবুচন্দ্র! আপাতত ঐ সুড়ঙ্গের কাজটা বন্ধ রাখো।

—কিন্তু আমার টাকা। অনেক অনেক টাকা যে ওরা এর মধ্যে নিয়ে ফেলেছে। সেসব কি জলে যাবে?

—আরে না! ওটাও এক ধরনের বিনিয়োগ। এসবই সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে যাবে। তখন যা দিয়েছ তার চারগুণ ফেরত আসবে। চারগুণ, আটগুণ, বারোগুণ—

—বলো কী ভগবান! এ তো সোনার হরিণ গো!

—হ্যাঁ, তা তো বটেই। এবার তবে আমাকে কিছু দাও গবুমন্ত্রী!

—আমার যে ভান্ডার তলানিতে নেমেছে ভগবান। এরপর চলব কী করে!

—আরে দাও, দাও দেরি করো না। তোমার যখন আসবে তখন আর তাল সামলাতে পারবে না, বুঝলে গবুচন্দ্র!

—আমি যে একদম মরেই যাব ভগবান চন্দ্র।

—ভগবান তোমার সহায় হলে তোমার আর চিন্তা কী!

 

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক জাগরণ এবং প্রধান সম্পাদক, দৈনিক কালবেলা