• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১, ০১:১৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০২১, ০১:১৫ এএম

আফগানিস্তানে আমেরিকা কী করতে পারত?

আফগানিস্তানে আমেরিকা কী করতে পারত?

আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সময় আমেরিকা যা করল তাতে সে কোনও পরিপক্কতার পরিচয় দিতে পারেনি। সে আফগানিস্তানে এল কেন? আবার সে গেল কেন? বলতে পারে তালেবান উৎখাতের জন্য। তালেবান কি উৎখাত হলো? আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য যেতে না যেতেই এমনকি থাকতেই তালেবান কাবুল দখল করে নিল। যে পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে আমেরিকা ও ন্যাটো আফগানিস্তানে এল তার কোনও সুফল কি ফলেছে? তাহলে আমেরিকা অফগানিস্তানে ২০ বছরে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে, ৩ হাজারের অধিক সৈন্য খুইয়ে কী পেল? ন্যাটোরও কিছু সৈন্য তালেবানের হাতে মারা গেছে। সব মিলিয়ে ন্যাটোর ৪ হাজারের অধিক সৈন্য নিহত হয়েছে। আমেরিকার অর্থ গেল, সৈন্য গেল, ফলাফল শূন্য হলো। আফগানিস্তান ছেড়ে আসার সময় আমেরিকা সাধারণ অফগানদের, নারীদের, তাদের সহযোগীদের, সংখ্যালঘুদের নেকড়ের মুখে রেখে এল। পরিবর্তনের আশায়, মুক্তির আশায়, আলোকিত ও আধুনিক জীবনের আশায় যে সমস্ত আফগান আমেরিকাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিল, আজ তারা মহা আতঙ্কে দিনপাত করছে।

আমেরিকা আফগানিস্তানের সকল গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে জাতিসংঘের অধীনে একটা আন্তর্জাতিক কমিশন করে একটা সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারত। তাতে যে দল ক্ষমতায় আসে আসুক। জনগণ যদি তালেবানকে নির্বাচিত করে, করুক। আপত্তি কি? নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আফগানিস্তানের সংবিধান রচনা করবে। কেউ বলতে পারেন আফগানিস্তানে বহুবার বহু সংবিধান রচিত হয়েছে- তাতে কী হয়েছে যদি তারা তা না মানে? আফগানিস্তানে বহুবার বহু সংবিধান রচিত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধিই আফগানিস্তানের সংবিধান রচনা করেনি। ফলে, যত সহজে যা রচিত হয়, তত সহজে তা বিলুপ্তও হয়। আমেরিকা আফগানিস্তান ইস্যুটি জাতিসংঘে তুলতে পারত। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যদি বিষয়টি সুরাহা করতে না পারত, তখন নিরাপত্তা পরিষদ যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারত। আমেরিকা বিষয়টি জাতিসংঘে তুলতে চায়নি। কারণ, সে মনে করে তাতে তার রাজনৈতিক পরাজয় হবে। আফগানিস্তানে আমেরিকার রাজনৈতিক পরাজয় তো হয়েছেই, এতে লুকানোর কিছু নেই। আমেরিকা যে মোল্লা আবদুল গণি বারাদির মাথার মূল্য ঘোষণা করলো ৫ কোটি ডলার, তার সাথেই বৈঠক করা কি আমেরিকার রাজনৈতিক পরাজয় নয়? যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে তালেবানের সাথে গোপন বৈঠকের দরকার কী? প্রকাশ্যে সকলকে নিয়ে বৈঠক করলেই তো হতো। তালেবানের কাছ থেকে সংবিধান মেনে চলার প্রতিশ্রুতি আদায় করে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমেরিকা দেখতে পারত তালেবান কী করে? তালেবান প্রতিশ্রুতি পালন করলে তারপরই আমেরিকা তার সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি নিতে পারত। আমেরিকা তালেবানের সাথে গোপন চুক্তি করেছে যে, তারা আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার আগে তালেবান সরকার গঠন করতে পারবে না। সে জন্য তালেবান রাজধানী কাবুল দখল করেও সরকার ঘোষণা দিচ্ছে না। তালেবানের সাথে আমেরিকার গোপন চুক্তি করা কি ঠিক হয়েছে? চুক্তি করলে প্রকাশ্যেই করত। তাই আমেরিকার সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা নিয়ে মানুষের সন্দেহ রয়েছে। তালেবানকে নিয়ে তো আছেই। আমেরিকা জানত তালেবান ক্ষমতা দখল করবে। তারা তালেবানকে শর্ত দিয়েছে তারা যেন মার্কিনিরা আফগানিস্তানে থাকতে কিছু না করে এবং তারা চলে যাওয়ার পর যা খুশি তাই করুক। আমেরিকার এ সব কর্মকাণ্ডে কি কোনও পরিপক্কতার পরিচয় মেলে?

'রাশিয়া ও চীন হচ্ছে বর্তমানে তালেবানের বন্ধু। রাশিয়ার মুসলিম বিদ্রোহী চেচেন ও চীনের উইঘুর মুসলিমদের জন্য তালেবানদের ব্যবহার করার পরিকল্পনা আমেরিকার রয়েছে।'

ভারত হলো আমেরিকার নতুন বন্ধু। ভারত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধু। পাকিস্তান ছিল আমেরিকার বন্ধু। এখন হয়েছে উল্টো। যাহোক, ভারত আমেরিকার পাশাপাশি আফগানিস্তানের পুনর্গঠন কাজে আত্মোনিয়োগ করে। উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে চাপে রাখা। পাকিস্তান যেন জঙ্গিদের ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে। আফগান জনগণকে মূলস্রোতে নিয়ে আসা। অর্থনীতি ও শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত করা। দারিদ্র্য ও অশিক্ষাই ধর্মান্ধতা ও জঙ্গিপনার কারণ। ভারত ধারণা করেছিল আফগানরা শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হলে তারা ধর্মান্ধতা ও জঙ্গিপনা ছেড়ে মূলস্রোতে ফিরে আসবে। এতে আফগানদের সাথে ভারতের বন্ধুত্ব হবে, অন্যদিকে জঙ্গি ঝুঁকি হ্রাস পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাবে। সে সাথে পাকিস্তানও চাপে থাকবে। এ জন্য ভারত আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। ভারত আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশে ৪০০টি প্রকল্পে কাজ শুরু করে। রাস্তাঘাট, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ, ক্লিনিক, পার্লামেন্ট ভবন, শিক্ষা, প্রযুক্তিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এসব কাজ করতে গিয়ে ভারতের ১১ জন ইঞ্জিনিয়ার জঙ্গিদের হাতে প্রাণ হারান। ভারত আফগানিস্তানে উপহার হিসেবে ৪০০ বাস, ২০০ মিনিবাস, সেনাবাহিনীর জন্য ২৮৫টি গাড়ি, ১০৫ টি সরকারি গাড়ি, ১০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৩টি বিমান দেয়। সবই জলে যায়। সে সাথে ভারতের ৩০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা গেল। এত কিছুর পরেও ভারত পড়ে গেল সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে। আফগানিস্তানের বিপর্যয় তার নতুন বন্ধুকে বিপদে ফেলবে এটাও তো আমেরিকার ভেবে দেখা উচিত ছিল। সে চীনের বিরুদ্ধে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠন করেছে কোয়াড (Quadrilateral Security Dialouge)। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার বিদায়ের ফলে সেখানে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে। ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে। তারা কোয়াডের পাল্টা হিসেবে আরেকটি স্কোয়াড গঠন করবে যার সদস্য হবে চীন, রাশিয়া, ইরান ও পাকিস্তান। চীন, পাকিস্তান ভারতের চিরশত্রু। তারা আফগানিস্তানের জঙ্গিদের ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে কি না- ভারত এখন আছে সেই দুশ্চিন্তায়। আমেরিকা আছে আটলান্টিকের ওই পারে। জঙ্গিপ্রবণ এলাকা থেকে সে দূরে আছে। কিন্তু যারা কাছে আছে তারা কি শান্তিতে থাকতে পারবে? এসব ভেবে দেখা উচিত ছিল। জঙ্গি সৃষ্টি করা যেমন আমেরিকার ঠিক হয়নি, তেমনি জঙ্গিদের দমন বা নিয়ন্ত্রণ না করে তাদের কাছে আত্মসমর্পন করাও ঠিক হয়নি।

আবার আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা খাতে ৮৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করে আমেরিকা কী ফল পেল? এত আধুনিক অস্ত্র, সাজোয়া যান, যুদ্ধবিমান, এত সামরিক সদস্য (তিন লক্ষ) কোন কাজে লাগল? বিনা প্রতিরোধে তালেবান কাবুল দখল করে নিল। তা-ও মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য উপস্থিত থাকতে! আফগানিস্তানের মার্কিন অস্ত্রের মালিক এখন তালেবান। বিস্ময়কর ব্যাপার! এসবের কি কোনও ধারণাই আমেরিকার ছিল না? তার গোয়েন্দা বাহিনী কি ব্যর্থ? নাকি আমেরিকা ইচ্ছা করেই এসব করছে অথবা অন্য কোনও ফন্দি আছে? কোনও ফন্দিই সুখকর নয়। মুজাহিদীন, তালেবান, আল কায়েদা, আইএস সৃষ্টি তার প্রমাণ। আমেরিকার সদিচ্ছা থাকলে সুস্থ পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যেতে পারত। তাতে আমেরিকা স্বস্তি পেত, আফগানরাও স্বস্তি পেত। স্বস্তি পেত সারা বিশ্ব। অনেকের ধারণা, আমেরিকা ভবিষ্যতে আবারো তালেবান নিয়ে খেলবে। এজন্য সে তালেবানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায়নি। আমেরিকা যদি ইচ্ছে করে যে, সে সন্ত্রাসীদের দমন করবে, তাহলে তার কাছে তা কোনও ব্যাপারই না। রাশিয়া ও চীন হচ্ছে বর্তমানে তালেবানের বন্ধু। রাশিয়ার মুসলিম বিদ্রোহী চেচেন ও চীনের উইঘুর মুসলিমদের জন্য তালেবানদের ব্যবহার করার পরিকল্পনা আমেরিকার রয়েছে।

যে যা নিয়ে খেলে তাতেই তার মৃত্যু হয়। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১) ছিলেন সৈনিক, হলেন সম্রাট। সারা জীবন তিনি যুদ্ধ করেছেন। তিনি ৪০টি যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। যুদ্ধ করেই তাঁর উত্থান। আবার যুদ্ধেই তাঁর পতন। আমেরিকাও তদ্রুপ জঙ্গি নিয়ে খেলছেন, জঙ্গির হাতেই তার পতন হবে। এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ। পতনের সময় কোনও বুদ্ধি মাথায় খেলে না। প্রবাদে আছে, “জয়কালে ক্ষয় নাই, মরণকালে ওষুধ নাই।” তাই যদি না হতো, তাহলে নেপোলিয়ন ও হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫) রাশিয়া আক্রমণ করতে যাবে- দু’জনেই বিশাল সৈন্যবহর ও সমরাস্ত্র নিয়ে রাশিয়া আক্রমন করতে যায়।  প্রকৃতির প্রতিশোধে দুইজনেরই পতন হয়। হিটলার ১৯৩৯ সালে রাশিয়ার সাথে অনাক্রমণ চুক্তি করে। নিজের চুক্তি নিজেই ভঙ্গ করে ১৯৪১ সালে রাশিয়া আক্রমণ করে বসে। ৪ মিলিয়ন সৈন্য, ২৫০০ যুদ্ধ বিমান, ২৭০০ ট্যাংক নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করে হিটলার। তুষার ঝড়ে প্রায় সব শেষ হয়ে যায়। হিটলারের পতন আর ঠেকায় কে? ১৮১২ সালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নও রাশিয়া আক্রমণ করতে গিয়ে তুষার ঝড়ের সম্মুখীন হন। ৬ লাখ সৈন্যের অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে যায়। মাত্র ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন। শুরু হলো তাঁর পতনের পালা।

আমার কাছে মনে হয়, আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় আমেরিকার মাথায় সাধারণ বুদ্ধিও কাজ করেনি। তালেবানকে নির্মূল করতে সে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তানে এল, তা দখলও করল। তালেবান নির্মূল তো হলোই না, বরং পূর্বের চেয়ে শক্তিশালী হলো। আমেরিকার অস্ত্র দিয়েই তালেবান এখন শক্তিশালী। তালেবান এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ফেলে যাওয়া অস্ত্র ও আফগান সরকারকে উপহার দেয়া অস্ত্রের মালিক। যার মূল্য ৩০০০ কোটি টাকার অধিক। এর মধ্যে রয়েছে বন্দুক, এম রাইফেল, নাইট ভিশন গগলস, মর্টার, ড্রোন, বিমান, হেলিকপ্টার ইত্যাদি। ২০০৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আফগান পদাতিক বাহিনীকে দিয়েছে এম ১৬ রাইফেলসহ ৬ লাখ অস্ত্র, ১ লাখ ৬২ হাজার যোগাযোগ সরঞ্জাম, ১৬ হাজার নাইট ভিশন গগলস ইত্যাদি। তালেবান আরো লাভ করেছে ২ হাজারের মতো সাজোয়া যান, যার মধ্যে হামভি যানও রয়েছে- যা মাইন প্রতিরোধী, ব্লাক হক হেলিকপ্টারসহ স্ক্যান ইগল মিলিটারি ড্রোন ৪০ টি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে উপহার দিয়েছিল ২০৮টি বিমান। অবশ্য ৪০-৫০ বিমান নিয়ে আফগান বৈমানিকরা উজবেকিস্তানে পালিয়ে গেছে। যাবার বেলা আমেরিকা তালেবানকে শক্তিশালী করে দিয়ে গেল।

'আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে প্রস্থানের ব্যাপারে ন্যাটো সদস্যদের সাথে আলোচনা করতে পারত। আমেরিকা তালেবানের সাথে দোহায় কয়েক দফা আলোচনায় বসে। অথচ ন্যাটোর সদস্যদের সাথে আলোচনায় বসে না। কেউ বলতে পারেন, ন্যাটোর সাথে আলোচনা হয়ত করেছে। যদি ন্যাটোর সাথে আমেরিকা আলোচনা করে থাকে, তাহলে তার ফল কী?' 

১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল। সে সময় তাদের হাতে এতো আধুনিক অস্ত্র ছিল না। তখন কাবুলে তালেবান আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও সমগ্র আফগানিস্তানে পারেনি। আফগানিস্তানের কয়েকটি অঞ্চলে কতিপয় উপজাতি নেতা তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পঞ্জশিরের আহমদ শাহ মাসুদ (১৯৫৩-২০০১)। আলকায়েদা টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ২ দিন আগে ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০১ সালে সাংবাদিক পরিচয়ে সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা বলে আত্মঘাতি বোমা মেরে তাঁকে হত্যা করে। আল কায়েদা তথা লাদেনের ধারণা ছিল টুইন টাওয়ার হামলার পর আহমদ শাহ মাসুদ আমেরিকার সহযোগিতা নিয়ে কাবুলের ক্ষমতা দখল করতে পারে। তাই আগেই তাঁকে শেষ করে দিল। আহমদ শাহ মাসুদ নিহত হওয়ার পরে তাঁর ছেলে আহমদ মাসুদ পঞ্জশিরের নেতা হন। এ আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে পঞ্জশির এখনও তালেবানের কাছে আত্মসমর্পন করেনি। তালেবান আমেরিকার আধুনিক অস্ত্র নিয়ে পঞ্জশির অবরোধ করে রেখেছে। তালেবানের আধুনিক অস্ত্রের নিকট পঞ্জশিরবাসী কিভাবে টিকবে? পূর্বে তালেবানের বিরুদ্ধে লোকাল কিছু শক্তি প্রতিরোধ করে টিকেছিল, এবার সে সম্ভাবনা নেই। কেননা, তালেবান এখন মার্কিন অস্ত্র পেয়ে আরো শক্তিশালী। আমেরিকা তার অস্ত্রগুলো নিয়ে যেতে পারত বা তালেবান বিরোধী শক্তিকে দিয়ে আফগানিস্তানে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে পারত।

আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে প্রস্থানের ব্যাপারে ন্যাটো সদস্যদের সাথে আলোচনা করতে পারত। আমেরিকা তালেবানের সাথে দোহায় কয়েক দফা আলোচনায় বসে। অথচ ন্যাটোর সদস্যদের সাথে আলোচনায় বসে না। কেউ বলতে পারেন, ন্যাটোর সাথে আলোচনা হয়ত করেছে। যদি ন্যাটোর সাথে আমেরিকা আলোচনা করে থাকে, তাহলে তার ফল কী? এই নাকি ইউরোপ আমেরিকার পাণ্ডিত্যের ফল! আর যদি আমেরিকা ন্যাটোর সদস্যদের সাথে আলোচনা না করে একাই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর মেরুদণ্ড আছে বলে কি মনে হয়? তাদের ন্যাটোতে থাকার অর্থ কি আমেরিকার গোলামি করা? ন্যাটোও আফগানিস্তানে যে টাকা খরচ করেছে- তা কম নয়। বিবিসি বাংলা নিউজ সূত্রে দেখা যায়, ইংল্যান্ড আফগানিস্তানে খরচ করেছে ৩০০০ কোটি ডলার, জার্মানি ১৯০০ কোটি ডলার। অন্যান্য সদস্যও কম বেশি করেছে। তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের নেতা হতে চায়। এ জন্য ইউরোপ আমেরিকার বিরুদ্ধে দু’একটা ফাঁকা বুলিও ছাড়ে। আবার আমেরিকার কথা মতো সৈন্যও পাঠায়। যাহোক, আমেরিকা ও তার জোয়াল টানা আবাল ন্যাটোকেও আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরিপক্কতার পরিচয় দিতে দেখা যায়নি।

 

লেখক ●সহযোগী অধ্যাপকইতিহাস বিভাগসরকারি রাজেন্দ্র কলেজফরিদপুর।।

দ্রষ্টব্যঃপ্রকাশিত লেখাটি লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত এবং এর দায়-দায়িত্বও লেখকের একান্ত নিজস্ব  

জাগরণ/এসকেএইচ