• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০১৯, ১০:০১ এএম

চুয়াডাঙ্গায় ১৩ মাসে ৩৭ কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

চুয়াডাঙ্গায় ১৩ মাসে ৩৭ কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

 

চুয়াডাঙ্গায় গত ১৩ মাসে ৩৭ কোটি ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৩ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব পণ্য জব্দ করা হয়। এসব ঘটনায় ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিজিবি বাদি হয়ে মামলা করে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি জেলার জীবননগর উপজেলা শহর থেকে আমদানি নিষিদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ৬ লাখ ৫০ হাজার ৪৬৭টি ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এসব ওষুধের বাজারমূল্য ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ২৫ টাকা। 

একই বছরের ৮ জানুয়ারি জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি বাজার এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আরো ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ওষুধ জব্দ করে বিজিবি। ১৮ মার্চ দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ২ লাখ ১৬ হাজার ২০০ ডলার উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশি টাকায় এসব ডলারের মূল্য ১ কোটি ৮১ লাখ ৯১২ টাকা (৮৩ দশমিক ৭৬ পয়সা ধরে)। এ ঘটনায় আটজনকে আটক করে বিজিবি।

২৫ এপ্রিল দামুড়হুদা উপজেলার নাস্তিপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩৭ কেজি ৩২৪ গ্রাম ওজনের ৩২০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়, যার বাজারমূল্য ১৬ কোটি টাকা। 

২৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৮১৫ গ্রাম ওজনের সাতটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৬ টাকা। এ ঘটনায় একজনকে আটক করে বিজিবি। 

২ জুলাই দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর তেলপাম্পের কাছে অভিযান চালিয়ে ৮১৫ গ্রাম ওজনের সাতটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে বিজিবি। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মূল্য ৩৫ লাখ ২ হাজার টাকা। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়। 

৬ আগস্ট দামুড়হুদা উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১৩ কেজি ৪৬০ গ্রাম ওজনের রুপার গহনা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত গহনার মূল্য ২২ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা। এ ঘটনায় আব্দুল আলিম নামে পলাতক এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করে বিজিবি। 

২৮ আগস্ট দর্শনা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এক যাত্রীর দেহ তল্লাশি করে ১৭ হাজার ২০০ ডলার জব্দ করা হয়। বাংলাদেশি টাকায় ওই ডলারের মূল্য ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৭২ টাকা। এ ঘটনায় হোসেন মোহাম্মদ সাব্বির নামে ওই যাত্রীকে আটক করে বিজিবি। 

২৯ আগস্ট একই স্থানে আরেক যাত্রীর কাছ থেকে ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩২০ ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য ২১ লাখ ৯১ হাজার ৯৪৮ টাকা (১ দশমিক ২০ পয়সা ধরে)। এ ঘটনায় হেলাল উদ্দিন নামের ওই যাত্রীকে আটক করা হয়। 

৩০ আগস্ট দামুড়হুদার হঠাৎপাড়া চার রাস্তার মোড় থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৮ কেজি ৭০০ গ্রাম রুপার গহনা উদ্ধার করে বিজিবি। যার মূল্য ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ টাকা। ৭ অক্টোবর দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৪৫ লাখ ৩২ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ২৭ কেজি ওজনের রুপার গহনা জব্দ করে বিজিবি। এ ঘটনায় খাইরুল বাশার নামে একজনকে আটক করা হয়। 

৩১ অক্টোবর দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা ফিলিং স্টেশনে যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি করে ১ কেজি ৬৪৮ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ৬৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা। এ ঘটনায় সেলিম মিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়। 

২১ ডিসেম্বর দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে ১৫৫ গ্রাম ওজনের ২৬০টি স্বর্ণের বার ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে বিজিবি। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণ ও জব্দ করা মোটরসাইকেলের মূল্য ১২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় আনোয়ারুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করা হয়।

এদিকে, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দামুড়হুদার দর্শনা পরানপুর মোড়ে অভিযান চালিয়ে ৪ কেজি ২১১ গ্রাম রুপা ও তিন কেজি গাঁজা উদ্ধার করে বিজিবি। উদ্ধারকৃত রুপা ও গাঁজার মূল্য ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা। ৯ ফেব্রুয়ারি দামুড়হুদার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৯ কেজি উন্নতমানের রুপার গহনা, ১৬ কেজি ৫০০ গ্রাম নিম্নমানের রুপা এবং ১ কেজি ইমিটেশনের গহনা উদ্ধার করা হয়। এসব গহনার বাজারমূল্য ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ২৫০ টাকা। এ ঘটনায় উজ্জ্বল হোসেন নামে একজনকে আটক করে বিজিবি।

চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের পরিচালক ইমাম হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি করছে বিজিবি। এ কারণেই আগের তুলনায় চোরাচালান অনেক কমে গেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে ১৪টি, কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে ১০৯টি ও বিওপি কমান্ডার পর্যায়ে ৩২৮টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে চোরাচালান রোধে ভারত-বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।

তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির আওতাধীন ঠাকুরপুর বিওপি সংলগ্ন এক কিলোমিটার বেড়াবিহীন স্থানে রাতে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবি সদস্যরা নির্বিঘ্নে টহল দিতে পারছেন। তাছাড়া সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ বিভিন্ন অপকর্ম প্রতিরোধে বিজিবি তৎপর রয়েছে।

কেএসটি