• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০১৯, ০৭:১৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১২, ২০১৯, ০২:৩৭ এএম

চিরদিনের জন্য কবরে শায়িত নুসরাত 

চিরদিনের জন্য কবরে শায়িত নুসরাত 
নুসরাতের জানাজায় মানুষের ঢল ; ছবি- দৈনিক জাগরণ


হাজারও মানুষের ভালোবাসা নিয়ে চিরদিনের জন্য দাদির পাশে শায়িত হলেন ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা আলিম এর ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি।

বৃহস্পতিবার ( ১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সোনাগাজী মো. ছাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে নুসরাতের জানাজা নামাজ পড়ান তার বাবা মাওলানা মো. মুসা। এ সময় উপস্থিত হাজারো মানুষের মুখে ছিলো একটাই দাবি, ‘নিষ্পাপ নুসরাতের নির্মম হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।’

বিভিন্ন জায়গায় থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান।

জানাজার প্রাক্কালে নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমি আমার বোনের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। আমার বোনের অনেক স্বপ্ন ছিল, তা আর কখনও পূরণ হবে না। নুসরাতকে আর আমরা ফিরে পাবো না। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বোনকে নিজের মেয়ের মত করে দেখেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কঠিন বিচার হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। 

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক আমরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে যে বা যারা জড়িত আছে, তাদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচার করবো। আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটুক আমরা তা চাই না। তাই জেলার সকল শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

ফেনী’র পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম বলেন, আপনারা নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের বিচার অবশ্যই পাবেন। ফেনী পুলিশ প্রশাসন এর মধ্যেই হত্যাকারীদের অনেককে গ্রেফতার করেছে, লম্পট ধর্ষক সিরাজউদ্দৌলাকে রিমান্ডে নিয়েছে। আশা করছি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে বাকি যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন দ্রুত বাকি হত্যাকারীদের গ্রেফতার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানান। তিনি বলেন, আমি চাই না আমার আর নুসরাতের মত কোন বোন এভাবে করুন মৃত্যু হোক। 

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি.কম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

জানাজার নামাজ শেষে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে চিরদিনের জন্য নুসরাত জাহান রাফিকে দাদির পাশে সমাহিত করা হয়।

এর আগে ১০৮ ঘণ্টা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বুধবার রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। 

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত। মাদ্রাসাছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকাপরা ৪-৫ জন তাকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা তার শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।

অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। এই মামলায় আসামিদের আইনি সহায়তা দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বুলবুল (ঘটনার পর বহিষ্কৃত)।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

আরআই