• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০১৯, ০৯:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০১৯, ০৩:৩৬ এএম

সংসদ সদস্য মাশরাফীকেও তোয়াক্কা করছেন না চিকিৎসকরা 

সংসদ সদস্য মাশরাফীকেও তোয়াক্কা করছেন না চিকিৎসকরা 
গত বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শনে রোগীদের কাছ থেকে নানা অব্যবস্থাপনার কথা শোনেন নড়াই-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকেও তোয়াক্কা করছেন না চিকিৎসকরা। প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসকদের খুঁটির জোর নিয়ে। 

মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা সদর হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শন করে তিন চিকিৎসকের অনুপস্থিত দেখতে পান। পরে তাদের বিরুদ্ধে শোকজ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে শনিবারও ৬ চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছুটিতে। শোকজ প্রাপ্তরা হলেন- সদর হাসপাতালের সার্জারি (সিনিয়র) বিশেষজ্ঞ আকরাম হোসেন, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ (জুনিয়র) শওকত আলী ও কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ (জুনিয়র) কাজী মোহাম্মদ রবিউল আলম। 

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে শোকজের এ সিদ্ধান্ত নেন। 

জানা গেছে, জাতীয় ক্রিকেট ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে এক অনুষ্ঠান শেষে আকস্মিকভাবে সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় কর্তব্যরত তিন চিকিৎসকের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না দেখে তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আবদুস শাকুর এবং পরে অনুপস্থিত সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আকরাম হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সমস্যা শোনেন। 

এ সময় তিনি হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখতে পান। ওইদিনই রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন মাশরাফী। 

হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুস শাকুর, সিভিল সার্জন ডা. আসাদ-উজ-জামান মুন্সি, হাসপাতালের আরএমও ডা. মশিউর রহমান বাবুসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মাশরাফী-বিন মোর্ত্তজা বেশ কিছু বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেন। নিদের্শনাগুলো হলো- যেসব চিকিৎসক হাসপাতালে সময়মতো আসেন না এবং অনুপস্থিত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল যেটুকু সেবা দেয়া সম্ভব তার সবটুকু যেনো সাধারণ রোগীরা পান। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকদের হাসপাতালে অবস্থান করতে হবে। হাসপাতালের দু’টি অ্যাম্বুলেন্স বাদে প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকতে পারবে না। কোনো দালাল চক্র হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। রোগীরা যাতে সরকারের সরবরাহকৃত ওষুধ পান সে ব্যাপারে জবাবদিহি থাকতে হবে। বড় বড় ওয়ার্ডে দুজন করে নার্স দিতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালের জেনারেটর চালু রাখতে হবে। এর কোনটা ব্যতয় ঘটলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালে যতটুকু রিসোর্স রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালের প্রতিদিনকার কর্মকাণ্ড জেলা প্রশাসক ও এসপিকে অবহিত করতে নির্দেশ দেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ আবদুর রহমান, মেডিকেল অফিসার এ এস এম ছায়েম এবং সংযুক্তিতে পদায়নকৃত চিকিৎসক কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ শওকত আলী ও কাজী মোহাম্মদ রবিউল আলম ও ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তাফিজুর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন। আর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়ানুর হোসেন ছুটিতে রয়েছেন। 

জানা গেছে, ৩৯টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে আরএমও এবং ৫ জন সংযুক্তিতেসহ ১৭জন চিকিৎসক রয়েছেন। তারমধ্যে অধিকাংশ চিকিৎসকই সপ্তাহে ১ থেকে ৩ দিনের বেশি কর্মস্থল উপস্থিত থাকেন না। 

চিকিৎসকরা ফাঁকিবাজি করছেন বলে স্বীকার করেছেন সদর হাসপাতালের নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুস শাকুর। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার অনুপস্থিত তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শোকজ করা হয়েছে এবং তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। যেসব চিকিৎসক ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, নানা সময়ে চিকিৎসকদের হাসপাতালে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও তারা তা করেন নি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এসএমএম