• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০১৯, ০৩:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৭, ২০১৯, ০৩:৫৪ পিএম

স্বাদে গুণে অনন্য নাক ফজলি আম

স্বাদে গুণে অনন্য নাক ফজলি আম

স্বাদে গুণে অনন্য নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের নাক ফজলি আম। আম চাষিরা বর্তমানে গাছ থেকে এ আম নামানোর জন্য সকল প্রস্ততি গ্রহণ করেছেন। তবে রোজার মাসে আমের চাহিদা কম থাকায় দাম কমের আশংকা করছেন আম চাষিরা। অন্যদিকে নাক ফজলি আমের গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণ করে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি অফিস। 

আম চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, নাক ফজলি আম ১৯৬৭ সালে আফতাব হোসেন ভান্ডারীর মাধ্যমে ধামইরহাট উপজেলায় প্রথম বিস্তার লাভ করে। অনেক আম চাষিদের মতে এ আমের নিচের দিকে নামের মত চ্যাপ্টা হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে নাক ফজলি। 

বর্তমানে বন বিভাগে এমএলএসএস পদে কর্মরত অফতাব হোসেন ভান্ডারী জানান, তার দাদার বাড়ি জেলার বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামে। ভান্ডাপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার খুকুমনি লাহেরীর কাছ থেকে তার দাদা এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। জমিদার খুকুমনি লাহেরী ভারতের কলকাতা এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে আফতাব হোসেন ভান্ডারী জোড় কলমের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর পুর্বে ধামইরহাট উপজেলায় এ আমের বিস্তার ঘটায়। বর্তমানে জেলার প্রায় সব উপজেলায় সর্বত্র কম বেশি এ আমের চাষ হচ্ছে। জোড় কলমের মাধ্যমে এ আমের চারা রোপণ করায় ১-২ বছরের মধ্যে গাছে মুকুল আসে। গাছের বয়স ৩-৪ বছর হলে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৪-৫ মণ আম পাওয়া যায়। 

ধামইরহাট পৌরসভার অন্তরগত নওয়াপাড়া গ্রামের আম চাষি আব্দুল কাদের বলেন, আগে এ আমের চাহিদা না থাকলেও এখন আম পাকার আগে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আম কেনার জন্য অগ্রিম বায়না দিচ্ছেন। কৃষক পর্যায়ে এ আম প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা দরে কেনা বেচা হয়। পরবর্তীতে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম বিক্রি হয়।

সাপাহার উপজেলার পাতারি গ্রামের আম চাষি আব্দুল হান্নান বলেন, রোগবালাই কম থাকায় এ আম চাষ করা সহজ ও লাভজনক। যারা একবার এ আমের স্বাদ গ্রহণ করেছেন পরবর্তীতে আবারও সংগ্রহের জন্য কৃষকদের নিকট ধর্না দিচ্ছেন। এ জেলার বাইরে এ আমের তেমন কোন পরিচিতি না থাকায় দেশবাসী এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারছেন না। তবে বর্তমানে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অধিবাসীরা যারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন তাদের মাধ্যমে এ আমের স্বাদ ও গুন অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা গ্রহণ করছেন। বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় এ আমের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নওগাঁ কৃষি অফিস জানায়, নওগাঁর অধিকাংশ আম বাগানে নাক ফজলি আম রয়েছে। এছাড়া গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া, আম্ররুপালি জাতের আম গাছও রয়েছে। কৃষকেরা কম বেশি প্রত্যেকের বাড়িতে কমপক্ষে ৩-৪টি করে নাক ফজলি আম গাছ লাগিয়েছেন। এক কথায় প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে নাক ফজলি আম গাছ এখন চাষ হচ্ছে। একটি নাক ফজলি আমের ওজন ৩শ থেকে ৪শ গ্রাম পর্যন্ত। পাতলা চামড়া এবং সরু বিচি যা অন্যান্য আমের চেয়ে আলাদা। মিষ্টতার দিক দিয়ে ন্যাংড়া ও আম্ররুপালি আমের সমতুল্য। এ আমে কোন আইশ না থাকায় খেতে খুবই সুস্বাদু। আম পাকার পর শক্ত ভাব থাকায় সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব। নাক ফজলি আম বাংলাদেশে শুধুমাত্র নওগাঁ জেলার ধামইরহাট, বদলগাছী, রানীনগর, পোরশা, সাপাহারসহ প্রায় সব উপজেলায় চাষ হচ্ছে। 

ধামইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, নাক ফজলি আম সব দিক থেকে অনন্য। এ আমকে ব্র্যান্ডিং আম হিসাবে পরিচিতির জন্য ইতোমধ্যে বিলবোর্ডসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এলাকার চাহিদা মেটানোর পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আম সববরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নাক ফজলি আম বিদেশেও রপ্তানির ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১ জুন থেকে নাক ফজলি আম নামানো শুরু হবে।  

কেএসটি