• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ৬, ২০১৯, ১০:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৬, ২০১৯, ১০:৩২ এএম

খুলনা-মংলা পোর্ট রেললাইন প্রকল্প 

নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়

নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়

দুই দফা সময় সীমা বাড়ানোর পরও খুলনা-মংলা রেললাইন স্থাপনের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে ২ দফা প্রকল্প মেয়াদের শেষ হওয়ার সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে। তৃতীয় দফায় আগামী ২০২১ সালর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।  

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সার্কভুক্ত প্রতিবেশী দেশগুলোর যোগাযোগ সহজীকরণ, মংলা বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। মংলা বন্দরকে রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করতে ফুলতলা থেকে মংলাবন্দর পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুটির দৈর্ঘ্য হবে পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়িজেভি প্রতিষ্ঠান। এরপর রেললাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং ব্রিজ তৈরির জন্য ওই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন এন্ড টার্ব (এলএনটি) নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়। এরপর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। চলতি বছরের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। 

দুই দফা সময় বাড়ানো হলেও এ পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। বাস্তবায়ন সংস্থার অভিযোগ, ভারত থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশ ছাড় করাতেই ৩-৪ মাস সময় লাগছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তৃতীয় দফায় ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। 

খুলনা-মংলা রেল লাইনের জন্য রেলসেতুর প্রথম স্প্যান বসে গত বছর আগস্টে। দৃশ্যমান হয় সেতু প্রকল্পে কাজ। তারপর থেকে সবশেষ বসানো গেছে মাত্র পাঁচটি স্প্যান। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাটার জোড়া দেওয়ার যন্ত্রাংশের (নাটবল্টু) অভাবে এই অবস্থা। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এটি নির্মিত হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য এক হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ, ব্রিজের জন্য এক হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বাকি টাকা। এছাড়া নির্মাণাধীন রেললাইনের মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে থাকছে ৩১টি ব্রিজ ও ১১২টি কালভার্ট। তবে খুলনা মংলা রেলসেতু প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রূপসা নদীর ভেতর পাইলিং স্থাপন। ইতিমধ্যে মাটির গুনগতমান বিচার করে নদীর ভেতরের পাইলিংয়ের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগামী মাসে ভারতের চেন্নাই থেকে যন্ত্রপাতি এনে শুরু হবে এই চ্যালেঞ্জিং কাজ। 

খুলনা-মংলা রেল প্রকল্প’র প্রকল্প পরিচালক রমজান আলী বলেন, স্প্যান জোড়া দেওয়ার যে যন্ত্রাংশ (নাটবল্টু) লাগে সেটা ভারত থেকে আমদানি করা। যা আসতে দেরি হচ্ছে। তবে সেই ক্ষেত্রে এলএনটি অন্য কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে আছে পাইল ও পাইল ক্যাব, পিয়ার ও পিয়ার ক্যাব।   

দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও দুটি স্প্যান বসবে। এছাড়া মাটির গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে পাইলের লেন্থও কোথাও কোথাও কমানো বাড়ানো হচ্ছে এবং পদ্মা সেতুর মতো পাইলিংএ ব্রেঞ্চগ্রাউডিংও করা হচ্ছে।

ভারতীয় এলএনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক অম্রিতোষ কুমার ঝা জানান, দ্রুত কাজ করতে নানা ধরনের বিড়ম্বনা রয়েছে। ৩-৪ মাস ধরে মালামাল সীমান্তে আটকে থাকছে। যা এই কাজের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এটা সমাধানের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ১৬৩টি স্প্যানের মধ্যে ভারত থেকে তৈরি হয়ে ৫৫টি ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে গেছে। বাকিগুলো আগামী নভেম্বরের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে চলে আসবে। যা পরিকল্পনার চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খুলনা-মংলা রেল লাইন চালুর হবে বলে আশা করি।

কেএসটি