• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০১৯, ০৭:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৭, ২০১৯, ০৭:০৬ পিএম

মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ধর্ষিত শিশু আছিয়া

মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ধর্ষিত শিশু আছিয়া

জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ৮ বছরের ধর্ষিত শিশু আছিয়া। ধর্ষণের এক বছর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৭ জুন) ভোররাতে শিশুটি ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় সবাইকে কাঁদিয়ে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। এদিকে আছিয়ার লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আনার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিশুটিকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসেন শত শত মানুষ।

আছিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মালতী গ্রামের দিনমজুর আশরাফ আলীর মেয়ে। গত বছরের ৯ জুন শিশুটিকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের তায়েজ উদ্দিনের বখাটে ছেলে মাহবুব (১৫)। এ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৯ জুন ধর্ষক মাহবুব প্রলোভন দেখিয়ে আছিয়াকে ডেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এতে আছিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে এলেঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার আরো অবনতি হলে শিশুটিকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।

২০১৮ সালের ৯ জুন আছিয়ার বাবা আশরাফ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের তায়েজ আলীর ছেলে মাহবুবকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছে ধর্ষিতার পরিবার। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট মামলার চার্জশিট প্রদান করে।

আছিয়ার নানা হযরত আলী বলেন, ঢাকায় আত্মীয়ের একটি বাসায় সোমবার ভোররাতে আছিয়া ব্যথায় ছটফট করতে থাকে। ওকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যায়। সোমবার দুপুরের দিকে তাকে কালিহাতীর মালতীতে আনা হয়। ধর্ষণের যথাযথ বিচার চেয়েছেন এলাকাবাসী।

কালিহাতীর নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদ বলেন, লাশ বাড়িতে আনার পর আমি গিয়েছিলাম। শিশুটি ঢাকায় ওর আত্মীয়ের বাসায় মারা গেছে। শিশুটিকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত শিশু ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেলের অফিসার (পিও) বায়েজিদ বলেন, সে সময় ধর্ষণের ফলে শিশুটির ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। তার মলদ্বার ও যৌনাঙ্গ ছিঁড়ে এক হয়ে যায়। এতে আটটি সেলাই করার পরও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে টাঙ্গাইলের তৎকালীন এডিসি জেনারেল নেসার উদ্দিন জুয়েলের আর্থিক সহায়তায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এক বছর ঢাকায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছিল শিশুটি। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের আক্রান্তরা মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন।

কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর মোশারফ হোসেন বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় সেই সময় মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ও আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিযেছে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, এটি একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। ধর্ষণের দ্রুত ও যথাযথ বিচার না হওয়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। আসামি মাহবুবের উপযুক্ত শাস্তি হলেই আছিয়ার আত্মা শান্তি পাবে। তিনি আরো বলেন, ধর্ষণ নামক এই ভয়াবহ ব্যাধি রোধ করতে হলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই।

এনআই