• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০১৯, ০২:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২২, ২০১৯, ০২:০৪ পিএম

আমের দ্বিতীয় রাজ্য নওগাঁ

আমের দ্বিতীয় রাজ্য নওগাঁ
আমের মোকাম থেকে আম নিয়ে আসছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা- ছবি: জাগরণ

বর্তমানে দেশের ঐতিহাসিক জেলা নওগাঁ আমের দ্বিতীয় রাজ্য বলে পরিচিতি পেয়েছে। এখন নওগাঁর ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলে উৎপাদিত আমের সুনাম দেশ জুড়ে। শুধু দেশেই নয় লাল সবুজের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে নওগাঁর আম বিশেষ করে নওগাঁর মাটিতে জন্ম নেয়া নাকফজলী। এর পাশাপাশি রয়েছে নওগাঁয় উৎপাদিত ল্যাংড়া ও হিম সাগর আমের সুনাম। 

নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা। এর মধ্যে সাপাহার উপজেলা সদরে রাস্তার দু’পার্শ্বে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে স্থাপিত কয়েক শ’ আমের আড়ৎ এখন দেশের বরেন্দ্র ভূমিতে উৎপাদিত সুমিষ্ট রসালো ফল হিমসাগর ও ল্যাংড়া আমের দখলে।

মধু মৌসুমের শুরু থেকেই দেশের এ সর্ববৃহৎ আমের মোকামে গুটি, গোপালভোগ, খিরশাপাতি, হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম ব্যাপক হারে আমদানি হতে দেখা গেছে। স্থানীয় ভাবে সাপাহার উপজেলাসহ আশে পাশের সকল উপজেলায় আম বাগান তৈরি হওয়ার কারণে এখানে আমের বৃহৎ মোকাম গড়ে উঠেছে। দেশের রাজধানী ঢাকাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শত শত আম ব্যাবসায়ীরা এখানে এসে আমের আড়ৎ খুলে প্রতিদিন হাজার হাজার মন আম কেনা বেচা করছেন। বিশেষ করে সরকারিভাবে আমের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরে গাছ থেকে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে আড়ৎগুলোতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে অনুমোদিত বিষমুক্ত ও পরিপক্ক আম আমদানি করা হচ্ছে। 

বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার রোধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা থাকায় স্বাস্থ্য সম্মত ফরমালিন মুক্ত আম এই এলাকায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। সাপাহারে উৎপাদিত হিমসাগর ও ল্যাংড়া আমের কারণে দেশের সর্বস্থরের মানুষের নিকট এ উপজেলা ইতিমধ্যে বিশেষ ভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। 

আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক শাহা জানান, বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ এ আমের মোকামে প্রতিদিন যে পরিমাণ আম আমদানি ও কেনা বেচা হচ্ছে তাতে রুপালি আম বাজারে আসলে মোকামের চিত্র অনেকটাই পাল্টে যাবে। উপজেলার কৃষকগণ এবারে ধানের মূল্য বিভ্রাটে কিছুটা হিমশিম খেলেও আমের বাজার ভাল থাকায় ধানের সে ক্ষতি কিছুটা হলেও আমের উপর উঠে আসবে বলে জানান তিনি। তবে আম্রাপালী আম ব্যাপক উৎপাদন হওয়ায় এবার শেষ দিন পর্যন্ত দাম সহনীয় পর্যায় থাকবে । 
 
উপজেলার সদরের আম বাগান মালিক শাহজাহান আলী বলেন, ধান চাষ করে ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে অনেকেই অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের আমবাগান থাকায় ধানের সে ক্ষতি আম থেকে উঠে আসছে। প্রতি বছর আমের মৌসুমে আম ব্যবসা ও বাজারজাতকরণে এলাকার হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া আমচাষিদের অনুকূলে থাকায় আমের বাজার দর মোটামুটি ভালো আছে। এখন প্রতি মণ ল্যাংড়া আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা, খিরশা, গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ১৬শ’ থেকে ২ হাজার টাকা মণ।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার উন্নত জাতের আম চাষ হয়েছে। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে ১৭ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। সাপাহার উপজেলায় এবারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০কোটি টাকা। বৃহত্তর এই আমের মোকাম ও উৎপাদিত আমের কারণে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। 

অপরদিকে, সর্ববৃহৎ এ আমের মোকামের আড়ৎদার, আম ব্যবসায়ী, আম চাষি ও বাগান মালিকদের সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে প্রতিদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলার সর্বত্র আম কেন্দ্রীক উৎসব ও আমেজ বিরাজ করছে। সারাদেশে আমের দ্বিতীয় রাজ্য হিসাবে নওগাঁর আমের মোকামগুলো পরিচিতি পেয়েছে। 

টিএফ