• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৯:১১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৯:১১ এএম

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি নিজেই রোগাক্রান্ত !

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি নিজেই রোগাক্রান্ত !

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই। কারণ হিসেবে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ১৪ বছর যাবৎ ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে ১০০ শয্যার এই হাসপাতাল চলছে। গত ১৪ বছর ধরেই এভাবে চলছে হাসপাতালটি। চিকিৎসকের ৩১টি পদ থাকলে হাসপাতালে আছে মাত্র ১৫ জন চিকিৎসক। চিকিৎসা সেবা চালু রাখতে কিছু চিকিৎসককে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেষণে এনে সংযুক্ত করা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।

জানা যায়, রোগীদের চিকিৎসার অবহেলার বিস্তর অভিযোগ। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। ফলে হাঁচি-কাশির রোগীকেও রেফার করতে হচ্ছে ঢাকায়। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এরপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রাদার ও নার্স জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। তাই, বেশিরভাগ পরীক্ষা করাতে হয় বাইরে থেকে। অ্যাম্বুলেন্স সেবার নামে চলে প্রতারণা। ডাক্তার দেখিয়ে বের হলেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে চলে দালালদের টানাটানি। 

এদিকে, রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক্সরে, প্যাথলজিসহ যেসব যন্ত্রপাতি আছে সবগুলো পুরনো অ্যানালগ প্রকৃতির। ডিজিটাল চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগে এসব মেশিন ব্যবহার করা খুব দুঃখজনক। এ হাসপাতালে পদের বিপরীতে ৫০ শতাংশের কম চিকিৎসক আছেন। হাসপাতালে নাক, কান, গলা, চোখ, ব্রেন, কিডনি, বক্ষব্যাধিসহ আরও অনেক চিকিৎসক নেই। জরুরি বিভাগে ৩ জন চিকিৎসকের জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র দুজন।

এছাড়াও আরও জানা গেছে, হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ নেই। হার্টের রোগীকে কোনও চিকিৎসা দেয়া যায় না। স্ট্রোক করলে রোগীর সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। কিন্তু এখানে সিটি স্ক্যানও নেই। দুপুর ২টার পর থেকে আলট্রাসনোগ্রাম ও প্যাথলজি বন্ধ হয়ে যায়।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) শাখাওয়াত হোসেন জানান, চোখ, নাক, কান, গলা বিভাগে কোনও চিকিৎসক নেই। এমন রোগী এলে কোনও সেবা দেয়া যাচ্ছে না। এক্সরে মেশিনসহ যেসব মেশিন রয়েছে সেগুলো পুরনো আমলের। ডিজিটাল কোনও মেশিন এখানে নেই।

এদিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রুগীদের। এ হাসপাতালে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুজন চালক আছে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স নিতে গেলে রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ এখন নিত্যদিনের। ডাক্তারের নির্দেশনা থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে অক্সিজেন দেয়া হয় না। ফলে চালকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগও রয়েছে। এই অক্সিজেন না দেবার কারণে গত ২৪ মে খোরশেদা বেগম নামে এক রোগীকে ঢাকা নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে মারা গেলে রোগীর স্বজনরা চালক জসিমকে দায়ী করে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে অকপট স্বীকারোক্তি দেয় অ্যাম্বুলেন্স চালক জসিম। তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স মেরামত করতে হয়েছে তাই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছি।’

ভোগান্তির ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। জনবল বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স চালকের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে, হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নতুন ভবনটি উদ্বোধন করা হচ্ছে না। ভবনটি উদ্বোধন হলে হাসপাতালটি মোট ২৫০ শয্যায় উন্নীত হবে। প্রায় তিন বছর আগে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নতুন ভবনটি হস্তান্তর করার কথা ছিল গণপূর্ত বিভাগের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জেলার সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, নতুন জনবল নিয়োগের আগ পর্যন্ত ভবনটি উদ্বোধন করা হবে না। তারপরও আমরা চিন্তা করছি নতুন হাসপাতাল ভবনে বর্হিবিভাগ চালু করা যায় কিনা।

টিএফ