• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০১৯, ০১:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৯, ২০১৯, ০১:২৯ এএম

পরিকল্পিতভাবে ‍‍‘রিফাত কিলিং মিশন‍‍’ চালায় নয়ন বন্ডের ‍‍‘০০৭‍‍’ গ্রুপ

পরিকল্পিতভাবে ‍‍‘রিফাত কিলিং মিশন‍‍’ চালায়  নয়ন বন্ডের ‍‍‘০০৭‍‍’ গ্রুপ

বর্তমানের 'টক অব দ্য কান্ট্রি' বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার জানা গেল, পরিকল্পিত ভাবেই হত্যা মামলার মূল আসামি নয়নের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।

জানা গেছে, রিফাত হত্যার মিশনটি পরিচালনা করেছে '০০৭' নামের একটি গ্রুপ। এই গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল বিখ্যাত ব্রিটিশ গোয়েন্দা উপন্যাস 'জেমস বন্ডের ০০৭' নামের সাথে মিল রেখে। যার প্রধান হিসেবেই ঘাতক নয়নের নামকরণ হয় 'নয়ন বন্ড'।  এই গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী।  আর তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ '০০৭'-এর গ্রুপ ম্যাসেঞ্জারেই দেয়া হয় রিফাত শরীফকে হত্যার যাবতীয় পরিকল্পনা ও নির্দেশনা।

ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা সংবলিত কয়েকটি স্ক্রিনশট এই তথ্যের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে সামনে এসেছে।  রাত আনুমানিক ১১টা নাগাদ বিভিন্ন তথ্যসহ একটি সূত্রের বরাতে সেই স্ক্রিনশটের ছবি দৈনিক জাগরণ প্রতিবেদকের হাতে পৌছায়।  এরইমধ্যে সেগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমের হাতেও পৌছে গেছে। 

এতে ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের টেক্সট বিনিময়ের একটি অংশে দেখা যায়, ঘাতক রিফাত ফরাজী আগের দিন রাত আটটার দিকে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের সরকারি কলেজের সামনে থাকার নির্দেশ দেয়। এসময় নামের প্রথমে 'Mohammad''সাগর' নামের একজন কোথায় থাকবে জানতে চাওয়া হয়। গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড ও মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরেজী উত্তরে তাদেরকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সকাল নয়টায় থাকতে বলে। রিফাত গ্রুপে দায়ের ছবি দিয়ে বলে, পারলে এইটা নিয়া থাইকো।  তখন Mohammad নামাংশযুক্ত ব্যক্তি রিপ্লাইয়ে দা নিয়ে উপস্থিত থাকবো বলে জানান।

তাৎক্ষনিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নয়নের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ০০৭ নামে একটি গ্যাং গ্রুপ কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘিরপাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল।  গ্রুপটির সদস্যরা '০০৭' কে তাদের ব্র্যান্ড সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহার করতো।  ঘাতক নয়নের মোটরসাইকেল ও বাড়ির দেয়ালেও এই ০০৭ বন্ড লেখা। এই গ্রুপ কেজি স্কুল, ক্রোক ও ধানসিঁড়ি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। বিশেষ করে তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও ব্যবসা, পলিটেকনিক কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রদের ম্যাচে এরা নিয়মিত হানা দিয়ে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে টাকা পয়সা আদায়, ছিনতাই, ধানসিঁড়ি এলাকায় একসাথে ঘুরতে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের অপদস্ত করে টাকা আদায়সহ বেশ কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে বলে জানা যায়।  ২০১৭ সালে রাকিব নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে যখম, পরের বছর ক্রোক এলাকার ফারুক প্যাদার ছেলে জীবনকে কুপিয়ে জখমসহ বেশ কিছু ঘটনার সাথে এই ০০৭ গ্যাং এর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এসব কাজে নয়ন সরাসরি অংশ না নিলেও তার নির্দেশনায় রিফাত ফরাজীর নেতৃত্বে গ্রুপটির সদস্যরা এসব কর্মকাণ্ড সংগঠিত করত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।  

গ্রুপের লিডার নয়ন বন্ড মূলত মাদক ব্যবসায় জড়িত। এছাড়াও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সাথেও গ্রুপটির সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মাদক ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পরে।  তার বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।

কেজি স্কুল এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের বরাতে পাওয়া তথ্য মতে, চুরি, ছিনতাই, লুটপাট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা এই ০০৭ বাহিনী করেনি।

ক্রোক স্লুইজ এলাকার এক বাসিন্দার তথ্য মতে, তার বিরুদ্ধে গতবছর জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষ এই গ্রুপকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়ায় আনে।  সে সময় নয়নসহ গ্রুপের আরো বেশ কয়েকজন সদস্য তার উপর হামলা চালায়। 

সূত্রের বরাতে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ওই এলাকার কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম নান্না জানিয়েছেন, ছাত্রদের ম্যাচ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনার বিচারের জন্য ডাকায় তার বাবা দুলাল ফরাজীর সামনেই আমার উপর হামলার চেষ্টা করে। আমি তখনকার পুলিশ সুপারসহ সব রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিছুই হয়নি।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, আমরা আসামিদের ধরতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। পুলিশের সব কটি উইংসহ র‌্যাব এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিশেষ টিম এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা সফল হবো।

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছি। এটি শুধু বরগুনা নয়, সারাদেশের পুলিশকে অপরাধীদের ব্যাপারে তথ্য দেয়া হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা আশা করি শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি দল। পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বরিশাল থেকে ১০ জনের স্পেশাল টিম ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। মিজানুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্ত শুরু করেছি।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ঘটনার দুই দিনেরও বেশি পার হলেও মূল আসামিরা ধরা পড়েনি। তবুও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গুরুত্ব দিয়ে আমার ছেলে হত্যার ঘটনায় তৎপরতাসহ গণমাধ্যমের সহায়তায় আমি সন্তষ্ট। আমি আশা করি শিগগিরই মূল আসামিরা ধরা পরবে এবং আমি আমার ছেলে হত্যার ন্যায় বিচার পাব।

এসকে

আরও পড়ুন