অপরাধ নির্মূল ও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের তিনি এই নির্দেশ দেন।

৩৬তম বিসিএসের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, মানবপাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মত অশুভ সামাজিক ব্যাধি। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এদেশের মাটিতে কোনভাবেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না।

তিনি আরো বলেন, জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, একজন মানুষ তার সবচেয়ে বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই আপনাদের সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে গণমানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বদাই এ দেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। বঙ্গবন্ধু পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলতেন, আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’ আমি আশা করি আপনারা জাতির পিতার সেই প্রত্যাশা পূরণে আপনাদের উপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আশা করি, আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকবেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান। পরে প্যারেড মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তাকে স্বাগত জানান।

এরপর প্রধানমন্ত্রী অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে নবীন পুলিশের সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন। পরে একটি খোলা জিপে চড়ে তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে।

তিনি বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্যারেডে ১৭ জন নারী অফিসারসহ ১১৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বীর কূটনীতিকবৃন্দ, অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজশাহীর গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।

কেএসটি