• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২১, ১১:২৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৫, ২০২১, ১১:২৯ এএম

কীটনাশক মুক্ত ফল চাষে কোটিপতি বাকী

কীটনাশক মুক্ত ফল চাষে কোটিপতি বাকী

নাটোরের বাগাতিপাড়ার উপজেলার খন্দকার মালঞ্চি গ্রামের চাষি আব্দুল বারী বাকী। নানা প্রতিকূলতায় পেরোতে পারেননি কলেজের গণ্ডি। কিন্তু নিজের অদম্য চেষ্টা ও আত্মপ্রত্যয়ে আজ তিনি স্বাবলম্বী। মাত্র এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কীটনাশক মুক্ত থাই-পেয়ারা, কমলা, মাল্টা, কাশ্মীরি কুল ও গোড়মতি আম চাষ করে নিজেই বদলেছেন নিজের ভাগ্য। পাশাপাশি দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটানোসহ ভূমিকা রাখছেন বেকারদের কর্মসংস্থানে।

জানা যায়, খন্দকার মালঞ্চি গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে বাকীর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। সেই স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাস থেকেই পথ চলা। ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হলেও নানা প্রতিকূলতায় পড়াশুনায় আর এগোতে পারেননি। তবে তার অদম্য আত্মপ্রত্যয় ধীরে ধীরে তাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যায়।

বাকী জানান, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি তার বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতেন। ধীরে ধীর তিনি নিজেই পেয়ার ও পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলজ গাছ চাষ শুরু করেন। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার স্বপ্ন পূরণে ব্যাঘাত ঘটালেও থেমে থাকেননি। বরং সাহস সঞ্চার করে বার বার ঝুঁকি নিয়েছেন ঘুরে দাঁড়াবার।

মাত্র এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৬ বিঘা জমিতে ফল বিভিন্ন জাতের ফল চাষ শুরু করেন বাকী। বর্তমানে তিনি প্রায় দুই’শ বিঘা জমিতে থাই পেয়ার, ৪৫ বিঘা জমিতে দার্জিলিং ও চায়না কমলা, ৪৫ বিঘা জমিতে মাল্টা, ২৪ বিঘা জমিতে কাশ্মীরি কুল ও ১০ বিঘা জমিতে গোড়মতি আম চাষ করছেন। তার এই বিনিয়োগের মূল্য এখন কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ফল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়।

বাকি আরো জানান, শুরুতে বাগাতিপাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তন্ময় কুমার দাস ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকারের অনুপ্রেরণাতে পুঠিয়ার এক চাষির কাছ থেকে থাই পেয়ারা চারা নিয়ে বাগান করেন। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে অন্যান্য ফলেরও চাষ শুরু করেন। তার এসব বাগানের মাটি মৃত্তিকা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। তাই এসব মাটিতে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। কৃষি ঋণ এবং সরকারীভাবে অন্যান্য সহায়তা পেলে আগামীতে পেয়ারার বাগান সম্প্রসারণের পাশাপাশি  ড্রাগন, শরিফা, হাই ব্রীট নারিকেলসহ উন্নত ফলের চাষ করতে চান তিনি।

বাকীর আরো জানান, কীটনাশক ছাড়া পেয়ারা চাষ করতে পলিথিনের ব্যাগ প্রয়োজন। তবে আইনি বাধ্য বোধকতার জন্য নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই থাই পেয়ারা, কমলা, মাল্টা, কাশ্মীরি কুল ও গোড়মতি আমের মতো পুষ্টিকর ফলকে কীটনাশকের বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে সরকারিভাবে পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মমরেজ আলী বলেন, “লাখ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে কীটনাশক মুক্ত ফলজ চাষ শুরু করা বাকী এখন কোটি টাকার মালিক। তার বাগানের পরিমাণ এখন প্রায় সাড়ে তিন’শ বিঘায় মতো। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা পরীক্ষাগার থেকে মাটি পরীক্ষা করে কীটনাশক ছাড়াই ফলজ গাছ চাষ করছেন তিনি।”

প্রতিবেশী ও সমাজসেবী মহিদুল ইসলাম মনি বলেন, “বাকী নিজের পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। তার ফলজ বাগানে প্রায় শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। প্রতি শ্রমিক মজুরি হিসেবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পেয়ে থাকেন।”

পেয়ারা বাগানে কাজ করা শ্রমিকদের সর্দার মাসুম রেজা ও মানিক চন্দ জানান, “কৃষক বাকি ভাই পেয়ারা চাষ করাতে আমরা নিয়মিত কাজ পেয়েছি এবং তার দেওয়া পারিশ্রমিক দিয়ে নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে সংসারের উন্নতি করেছি।”

বাগাতিপাড়ার ইউএনও প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বলেন, “আব্দুর বারী বাকী একজন সফল চাষি। তার ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি, ড্রাগন, শরিফা, হাই ব্রীট নারিকেল সহ অন্যান্য ফলের চাষ করতে চাইলে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হবে।”

স্থানীয় সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল এই ফলজ বাগান পরিদর্শন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকার যে কোনো উদ্যোক্তা আমাকে সবসময় পাশে পাবেন। তাদের যেকোনো সমস্যায় আমি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।”