• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২, ২০২১, ১২:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২, ২০২১, ১২:৫৮ পিএম

‘গরিবের গোশত সমিতি’

‘গরিবের গোশত সমিতি’

সারা দিন ভ্যান চালিয়ে সংসারের ঘানি টানেন বাবু। তার ওপর দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ঈদ এলে সবার কাপড়চোপড় কেনা আর তেল-সেমাই-চিনি কিনতে গিয়ে হিমশিম খান তিনি। 

সন্তানদের বায়না থাকে ঈদের দিনে গোশত খাওয়ার জন্য। কিন্তু দিনমজুর বাবার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। গত ঈদুল ফিতরে সন্তানের বায়না পূরণ করতে না পেরে এবার নগরপাড়া এলাকার দিনমজুর বাবু গোশত সমিতির সদস্য হয়েছেন।

শুধু দিনমজুর বাবু নন, রূপগঞ্জের শত শত পরিবার এখন গোশত সমিতির সদস্য। ঈদুল ফিতরের ঈদকে ঘিরে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ১৫০ সমিতি গড়ে উঠেছে। করোনার কারণে এবার সমিতির সংখ্যা কমে গেছে। গত বছর ছিল প্রায় ২০০ সমিতি। ‘গরিবের গোশত সমিতি’ এখন ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারপাড়া এলাকার তরুণ ফয়সাল মিয়া ২০১৭ সালে প্রথমে এ উদ্যোগ নেন। মোট ২৫ জন সদস্য নিয়ে তাদের গোশত সমিতির যাত্রা শুরু হয়। চাঁদা গুনতে হয় সপ্তাহে একশ টাকা। বছরে জমা হয় ৫ হাজার ২০০ টাকা। বিনিময়ে ঈদুল ফিতরের আগের দিন গোশত মেলে ১২ কেজি। এরপর থেকে এলাকায় একে একে গড়ে উঠতে থাকে গরিবের গোশত সমিতি। খামারপাড়া এলাকায় বর্তমানে ৬টি সমিতি রয়েছে। এছাড়া নগরপাড়া, দেইলপাড়া, কামশাইর, বরুণা, বরালুসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ সমিতি গড়ে উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ১৫০টির বেশি সমিতি ঈদের সময় গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের গোশতের চাহিদা পূরণ করছে। সারা বছর একটু একটু করে সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন মাংস সমিতির সদস্যরা। এতে করে ঈদে গরিব পরিবারগুলো বাড়তি আনন্দ পান এবং তাদের আর্থিক চাপও কমে যায়।

উপজেলার গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের মাংস বা গরু সমিতি গঠন করা হয়। মাংস সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিবছর বাড়ছে মাংস সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ জন। প্রত্যেক সদস্য সপ্তাহে ১০০ টাকা চাঁদা জমা দেন। ঈদুল ফিতরের দু-এক দিন আগে জমা করা টাকায় গরু কিনে এনে জবাই করে সদস্যরা মাংস ভাগ করে নেন। তবে চামড়া বিক্রির টাকায় পরের বছরের জন্য তহবিল গঠন করে সমিতির কার্যক্রম চলে।

জানা গেছে, খামারপাড়া এলাকার সমিতির খবর ছড়িয়ে পড়লে গত দুই বছরে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে গোশত সমিতি। এ সমিতি এখন গরিবের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। সপ্তাহে একশ টাকা সঞ্চয় হওয়ায় কারও তেমন সমস্যা হয় না। কথা হয় সমিতির সদস্য খামারপাড়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

সফিকুল বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ঈদে পোলাপানগোর কাপড়চোপড় কিনতেই টেকা শেষ অইয়া যায়। কোনোমতে তেল-সেমাই কিনি। আবার গোশত কিনুম কেমনে? যহন জানলাম সমিতি অইছে। তহন থেইক্যা সমিতিতে নাম লেহাই। অহন ঈদের আগে ১২ কেজি গোশত পামু।”

একই গ্রামের ফজলু হোসেন, মারতুজা ও আমির হোসেন বলেন, “এ সমিতি হওয়ায় গরীব মাইনসের (মানুষ) জন্য ভালা অইছে। সপ্তাহে ১০০ টাকা দিতে কষ্ট অয়না। ঈদ আইলে বাড়তি চিন্তা থাহেনা।”

মূল উদ্যোক্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, প্রথমে তাদের সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ছিল ২৫ জন। প্রত্যেকে সপ্তাহে টাকা জমা দিতেন। বছর ঘুরে সমিতিতে জমা হয় ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে গরু কিনে এনে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের ভাগে পাঁচ কেজি করে মাংস পড়েছে। তাদের এলাকাতেই এ ধরনের অন্তত ছয়টি সমিতি রয়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে এই গোশত সমিতি। শবেকদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির গরু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত।

কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুম আহম্মেদ বলেন, গরীবের গোশত সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন দিন এ সমিতির সংখ্যা বাড়ছে। সমিতির কারণে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত থাকে।