• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১, ১১:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৪, ২০২১, ১১:৩৮ এএম

ঝুড়ি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ 

ঝুড়ি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ 

ঝুড়ি বা ওড়া হলো গোল বেড়যুক্ত অর্ধগোলকাকৃতি বা তার থেকে একটু কম বক্রতার পাত্র যা বেত জাতীয় কাঠি দিয়ে বোনা। ঝুড়ি  নানা রকম বুনটের হয়। কম বুনটের চাঁছাড়ি (চেরা বাঁশ) বা চেরা মোটা বেত ইত্যাদি দিয়ে বোনা ঝুড়ি বাগান বা মাটি খোঁড়া ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হয়। ঘন বুনটের বড় ঝুড়িকে বলে ধামা যার মধ্যে শস্য ইত্যাদি রাখা যায়। ছোট ঝুড়িকে বলে চুপড়ি। সাধারণত এসব ঝুড়ি প্রস্তুত করতে কঞ্চি, খড়, প্লাসিক, ধাতুবাঁশ  ও পাম উপকরণ ব্যবহার করা হয়। একসময় দেশে এসব ঝুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব ক্ষুদ্র শিল্প।

এমন সময় প্লাস্টিক কিংবা সিলভার পণ্যের কাছে হার না মানা বাঁশের কারিগর লেয়াকত আলী। বাঙালীর পুরোনো ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে এখনো তৈরি করে চলছেন বাঁশের পণ্যসামগ্রী। আর এসব পণ্য বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ তার।

শনিবার পার্বত্য খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মধ্য বোয়ালখালী (পশ্চিম পাড়া) গ্রামে দেখা হয় লেয়াকত আলীর সাথে। এ সময় তার বাড়ির উঠানে আপন খেয়ালে আর নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছিলেন বাঁশের ঝুড়ি। তিনি মৃত জিন্নাত আলীর পুত্র। জন্ম ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় হলেও জীবিকার তাগিদে ১৯৮৭ সাল থেকে বসবাস করছেন পাহাড়ি এ জনপদে। প্রায় ২৫ বছর ধরে পাহাড় থেকে কঞ্চি,খড়,লতা,ধাতুবাঁশ ও পাম প্রভৃতি উপকরণ সংগ্রহ করে তৈরি করছেন ঝুড়ি বা ওড়া। আর এসব বিক্রি করে দৈনিক প্রায় ২শত টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। একমাত্র ছেলে সেও আবার প্রতিবন্ধী। ৬ সদস্যের সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস ঝুড়ি বিক্রি।

এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব ঝুড়ির চাহিদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বাশেঁর পণ্যের স্থানে প্লাস্টিক-সিলভারের পণ্যের ব্যবহার বেড়ে গেছে। তবুও মনোবল হারায়নি লেয়াকত আলী। হারাতে দেবেন না গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। সেই সঙ্গে এ পেশা দিয়েই সংসার চালাবেন, এমন দৃঢ়  মনোবল নিয়ে এখনো তৈরি করে চলছেন এসব ঝুড়ি বা ওড়া। এ দিয়েই মোটামুটি সংসার চলছে তার। 

লেয়াকত আলী জানায়, স্থানীয়ভাবে বাঁশ সংগ্রহ করে এবং তা দিয়ে তৈরিকৃত পণ্য হাট-বাজার-গ্রামে গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এটি দিয়ে যা লাভ হয়, সেটি দিয়ে পরিবার পরিজনের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।তিনি আরো বলেন, সরকারি-বেসরকারি  পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে ধরে রাখা সম্ভব। ফলশ্রুতিতে কমানো যেতে পারে বেকার সমস্যা। একই সঙ্গে গ্রামীন নারীদেরও সৃষ্টি হতে পারে কর্মসংস্থান।  

মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন বলেন, লেয়াকত আলীর তৈরি বাঁশের ঝুড়িগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন। গুণগত মানও অনেক ভালো। তাকে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, আমরা আগামীতে বাঁশ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের কথা ভাবছি। বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থ্যাগুলোকেই এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

জাগরণ/এমআর