• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ০৪:৫৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ০৪:৫৪ পিএম

পাল্টে যাচ্ছে তিস্তার দুর্গম চরবাসীর জিবনমান

পাল্টে যাচ্ছে তিস্তার দুর্গম চরবাসীর জিবনমান

এস. কে সাহেদ, লালমনিরহাট

সন্ধ্যা হলেই জ¦লে উঠবে বাতি। আলোয় আলোকিত হবে তিস্তার দুর্গম চরাঞ্চল। পৌঁছে যাবে ইন্টারনেট সেবা। পাল্টে যাবে চরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জিবনমান।

তিস্তা চরের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবের জন্য বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের  আওতায় গত বছর কালীগঞ্জ উপজেলার ওই শৈলমারী চরে ৩০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানী। সেই সাথে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত কোটি কোটি টাকা মুল্যের ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহন করতে তৈরী করা হয় রাস্তা,  ব্রীজ ও কালভার্ট। আর এভাবেই পাল্টে যাচ্ছে তিস্তা চরের চিত্র।

এদিকে স্থানীয় চরবাসির আবেদনের প্রেক্ষিতে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ মহলের সাথে আলোচনা করে চর এলাকায় দুইটি বেইলি ব্রীজ, ১৮ টি কালভার্ট নির্মাণ করে এবং নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার এলাকা সাই ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। চরের কয়েক কিলোমিটার দুর থেকে বিদ্যুতে খুঁটি বসিয়ে তার সংযোগ করে বিদ্যুত নিয়ে যান ওই দুর্গম চরাঞ্চলে। এরফলে অন্ধকারে আচ্ছন্ন ভোটমারী ইউনিয়েনর ১ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।

অবরুদ্ধ শৈলমারী চরবাসীসহ তিস্তার অন্যান্য চরের মানুষের জীবন যাত্রা পাল্টে যাবে। ইন্টারনেট সেবা ও টেলিভিশন দেখাসহ বিভিন্ন আধুনিক সুবিধা ভোগ করবে চরবাসী। এছাড়াও করোনার মহামারীর এই দুঃসময়ে সোলার প্রকল্পে চরের কয়েকশত শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন। মিলছেও ভালো মজুরী।

চরের বাসিন্দা দবিয়ার রহমান বলেন, দীর্ঘ দিন এই বালু চরে আছি কেউ খোঁজ নেয়নি। আমাদের কষ্ট ছিল বারো মাস। সৌর বিদ্যুৎ’ প্রকল্পটি এসে আমাদের ভাগ্য খুলছে। চরের রাস্তা নির্মান হওয়ায় খুব সহজে আমরা এখন উপজেলা শহরে যেতে পারছি।   

শৈলমারী চরের বাসিন্দা দেলদার মুন্সী, ওয়াহেদুল ইসলাম ও বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার বলেন, এখানে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি তাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। এ প্রকল্পের কারণে স্বপ্নের পাকা রাস্তা, ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। তাদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত তারা উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন। সহজেই তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার জন্য শহরে যেতে পারবেন। কর্মসংস্থানের জন্য তারাও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটতে পারবেন। আর বিদ্যুৎ পেলে তাদের এই চরেই ছোট ছোট মিল, কারখানা গড়ে উঠবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চরের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী হবে।

ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের প্রকল্প ডিরেক্টর অপারেশন আব্দুল হালিম জানান, বিদ্যুৎ সংকট দূর করতে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মূল গ্রীডে সংযুক্ত করা হবে। আর এভাবেই কেটে যাবে লোডশেডিং’সহ বিদ্যুতের সংকট। তিস্তার পানি প্রবাহে যাতে কোন বাঁধা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য দুইটি বেইলি ব্রীজ ও ১৮ টি কালভার্ট নির্মাণ করেছেন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড। এছাড়াও নদী ভাঙনরোধে হার্ড মেটিরিয়াল কাজ করা হয়েছে চার কিলোমিটার এলাকায়। এছাড়াও এই উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা পাবেন চরের মানূষজনসহ লালমনিরহাট জেলার মানুষজন। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বিদ্যুত সংকট কাটিয়ে উঠা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর যে কমিটমেন্ট তা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। তিনি আরও বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন থেকে সম্ভাব্য সব ধরেণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।