• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১, ০৫:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১, ০৫:১৩ পিএম

যমুনা পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

যমুনা পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

কাজল আর্য, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি কমলেও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অপর দিকে দেখা দিয়েছে ভাঙণ। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও জিআর এর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২৪ ঘন্টায় ধলেশ্বরী নদীর পানি বাড়লেও যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি কমেছে। যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭৯ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

জানা যায়, জেলার ভূঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, কালিহাতী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৭টি, নাগরপুর উপজেলার ৯টি, বাসাইল পৌরসভাসহ সবকটি (৬ টি) ইউনিয়ন, মির্জাপুর ৪টি ও দেলদুয়ার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে খাল, বিল, নদী ও বাড়ির আঙিনা পানিতে থই থই করছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের উত্তর-পূর্বাংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাছ বেথইর এলাকায় বাঁধের ১০০মিটারে ভাঙনের কবলে পড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করলে টাঙ্গাইল শহরে পানি ঢুকে পড়বে।
বন্যার পানিতে টাঙ্গাইল-পটলবাজার, টাঙ্গাইল-কাকুয়া, এলেঙ্গা-মগড়া, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী বাজার থেকে ভালকুটিয়া পর্যন্ত পাকা সড়ক, বাসাইল পৌরসভার একটি ব্রিজ ও কাঞ্চনপুরের গ্রোথ সেণ্টার-কাজিরাপাড়া সড়কে কালভার্ট প্রবল স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওইসব এলাকায় অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী এলাকার শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানিসহ শুকনা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। 

কালিহাতী উপজেলার মগড়া গ্রামে দুই সপ্তাহ আগে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে যাতায়াতসহ যাবতীয় কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সদর উপজেরার সুরুজ গ্রামে কয়েক দিন যাবত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়। এরমধ্যে ৭৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর এ চারটি উপজেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৪০ মে.টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে যথাস্থানে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও কালিহাতী উপজেলায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১১৮ টি পরিবারের মাঝে নগদ ৫ হাজার টাকা ও ঢেউটিন এছাড়াও ৯০ পরিবারের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার পাশাপাশি আগাম রবিশস্য চাষে সহায়তা দিয়ে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। 

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যায় পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলার নদী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পানি কমে গেলে স্থায়ীভাবে নদী তীর সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।