• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২, ০৯:৪৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২, ০৯:৪৮ এএম

গৌরনদীতে সংখ্যালঘুর ভিটে মাটি দখলের অভিযোগ 

গৌরনদীতে সংখ্যালঘুর ভিটে মাটি দখলের অভিযোগ 


বরিশাল গৌরনদী প্রেসক্লাবে বুধবার (২ ফেব্রয়ারি) দুপুরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার খাঞ্জাপুর গ্রামের হিন্দু সংখ্যালঘু বিমল কুমার মিত্র অভিযোগ করেন এলাকার প্রভাবশালী ছোরাপ হাওলাদার, ওসমান হাওলাদার, ডলি খানম, ইব্রাহিম খা, জাহানারা বেগম, বাচ্চু খা, শাহজাহান খা, রুবেল খা, মুরাদ খা, আনোয়ার সরদার, শিখা খানম, টোকন হাওলাদার, নজরুল হাওলাদার ও তাদের সহযোগীরা মিলে তার পৈত্রিক ভিটে মাটি দখল করে নেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন প্রতিপক্ষ ওই ব্যাক্তিরা যে কোন সময় তার পরিবারের সদস্যদের খুন করে লাশ গুম করে ফেলতে পারে। ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে বিমল কুমার মিত্র তার পৈত্রিক ভিটেমাটি রক্ষা ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্ত্বা বিধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেয়া লিখিত বক্তব্যে বিমল কুমার মিত্র বলেন, তার দাদা অনন্ত কুমার মিত্রের আমল থেকে দাদার অন্যান্য ওয়ারিশ গনের সাথে হারাহারি বন্টন মতে তার দাদার পরিবার  উপজেলার ৪৫নং খাঞ্জাপুর মৌজার আরএস ৪৫২, এসএ ৫৭০ নং খতিয়ানের ২৩৮৮, ২৩৯৬, ৪২২৩, ২৪২৬, ২৪২৭, ২৪২৮, ২৪২৯, ২৪৩২, ২৪৩৩, ২৪৩৪, ২৪৪৫,২৪৪৬, ২৪৪৭,২৪৪৯, ২৪৬৩ নং দাগে সর্বমোট ৩ একর ২০ শতক জমি ভোগ দখল করে আসছিল। দাদার মৃত্যুর পর তার পিতা জগদিশ মিত্র একই ভাবে ওই জমির বাড়ি-বাগান, পান বরজ ভোগ দখল করতেন। পিতার মৃত্যু পর তিনিও একই ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাসসহ উক্ত বাড়িঘর, বাগান, পানবরজ ভোগ করে আসছে। 

১৯৯৪ সালে প্রতিবেশী সাগির হাওলাদার, আবু বক্কর হাওলাদার, শাহজাহান খা অন্য ওয়ারিশগনের নিকট থেকে সম সামান্য জমিক্রয় করে তাদের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে তাদের ওয়ারিশ অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিরা বিমল কুমার মিত্রের বাড়ি ও বাগান থেকে গাছপালা কেটে নষ্ট করতে থাকে। তারা বিমল মিত্রের বাঁশ বাগান কেটে তরি-তরকারি চাষের ক্ষেত বানায়। বিমল মিত্র এতে বাঁধা দিলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজসহ মারধর করতে উদ্ধত হয়। এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালে ওই বাড়ি থেকে জোর পূর্বক বিমল মিত্রের পরিবারকে উচ্ছেদ করে। এ সময় সে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তখন পার্শ্ববর্তি মামা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। 

২০০৯ সালে বিমল কুমার মিত্র তার মামা বরিশাল বিএম কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. ননী গোপাল দাসের উদ্যোগে স্থানীয় থানা পুলিশের সহয়তায় বাড়িঘরের দখল ফিরে পান। সেই থেকে নানা উৎপাত ও হুমকি ধামকি সহ্য করে ওই বাড়িতেই বসবাস করে আসছিলেন। 

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারী) সকাল ৯টার দিকে ওই প্রতিপক্ষরা তার বাশ বাগান থেকে জোর পূর্বক ৪/৫ শতাধিক বাঁশ কেটে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এতে বাঁধা দিলে তারা অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করাসহ বিমল মিত্রের ছেলে অজয় কুমার মিত্রকে মারধর করতে তেড়ে আসে। এক পর্যায়ে তারা বিমল মিত্রের বসত ঘরে হামলা চালিয়ে ঘরের দরজা, জানালা ভাঙ্গার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনা তাৎক্ষনিক থানা পুলিশকে জানালে গৌরনদী মডেল থানার এসআই মোঃ ফারুক হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। পুলিশ ডাকায় কেটে ফেলা ৪/৫ শতাধিক বাশ নিয়ে যেতে না পারায় আরো ক্ষিপ্ত প্রতিপক্ষরা এখন তাকেসহ তার পরিবারের সবাইকে খুন করার হুমকি দিচ্ছে। তারা হাতে ধারালো দা ও লাঠি নিয়ে তাদের চলাফেরার পথে ওৎ পেতে থাকে। যে কোন সময় তারা যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে। 

সংবাদ সম্মেলনে করা বিমল মিত্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছোরাপ হাওলাদারের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে কল করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষ ওসমান হাওলাদার ও রুবেল খা মোবাইল ফেনে বলেন, জমি জমা নিয়ে আমাদের বিরোধ আছে। বিষয়টি মিমাংশার জন্য থানা পুলিশ উভয় পক্ষকে নিয়ে বসবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে আমরা সবাই মুসলমান বসবাস করি। একমাত্র বিমল মিত্রের পরিবারটিই শুধু হিন্দু। আমরা তাকে আরও দেখে শুনে রাখি। তার যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয় আমরা সে চেষ্টাই করি।

গৌরনদী মডেল থানার এসআই মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁশ কাটা বন্ধ করিয়েছি। বিমল মিত্রের সাথে প্রতিপক্ষ ছোরাপ গংদের পূর্ব বিরোধ সম্পর্কে আমার ধারনা নেই। তবে ওই জমিজমা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। উভয় পক্ষকে নিয়ে বিকেলে থানায় বসা হবে। সেখানে কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিমল কুমার মিত্র’র স্ত্রী ফুলদানী মিত্র ও তার ছেলে অজয় কুমার মিত্র।

দৈনিক জাগরণ/আরকে