• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২, ১২:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২, ১০:২৩ পিএম

কেশরহাট গিলে খাচ্ছে পৌর কাউন্সিলর

কেশরহাট গিলে খাচ্ছে পৌর কাউন্সিলর

এম. আব্দুল বাতেন
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌর বাজার সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেশরহাট পৌর কাউন্সিলর সাবের আলী ও তার বাহিনী এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা নিজের খেয়াল খুশিমত হাটের ভেতরে ও বাহিরে যেসব সরকারি জায়গা ফাঁকা রয়েছে সে জায়গাগুলো বাঁশের বেড়া, ইট দিয়ে তৈরী অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।

এতে হাটের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে বাড়ছে দুর্ভোগ। এসব সরকারি জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ঘটেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মামলা পাল্টা মামলা। এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী আরিফুজ্জামান রাসেলকে সাবের কাউন্সিলর ও তার লোকজন প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় মোহনপুর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করছেন তিনি।

বর্তমানে কেশরহাট বাজারে পৌর এলাকার ফুলশোঁ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী রাসেল আহম্মেদ ইট দিয়ে হাটের ১০৮ নম্বর মৌজার সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গা ও খাল দখল করে পিলার দিয়ে দোকানের জন্য বিল্ডিং তৈরী করছেন। এ খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে প্রায় ৩১টি।

এঘটনায় কেশরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে গত ১৯ জানুয়ারি (বুধবার) একটি নোটিশ প্রদান করেন।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড় ১০টায় আবারো বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেন রাসেল। স্থানীয় প্রশাসন তা জানতে পেরে আবারো কাজটি বন্ধ করে দেয়। ওই একই রাতে প্রশাসন ফিরে আসার পর রাত সাড়ে বারোটার দিকে সাবের কাউন্সিলের নেতৃত্বে তার লোকজন কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এসআই ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ পুনরায় কাজটি বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকায় তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে কাজটি বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যেই প্রশাসনের চোখের আড়ালে উঠে গেছে বিল্ডিং এর পুরোটা, এখন শুধু ছাদ ঢালাই দেয়া বাকি।

বিল্ডিংয়ের ছাদ দিতে না পারলেও তারা যেকোনো সরকারি ছুটির দিনে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, ব্যবসায়ী রাসেলের সহোদর ব্যাগ ব্যবসায়ী মতিন আহম্মেদ কাউন্সিলর সাবেরকে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে তাকেসহ তার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) কেশরহাটে অবস্থিত সরকারি পুকুরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে ফাঁকা জায়গা দখল করে বাঁশ ও কাঠের বেড়া দিয়ে রাতের আঁধারে স্থাপনা নির্মাণ করেন।

অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানওয়ার হোসেনের নির্দেশে কেশরহাট ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইকবাল কাশেম অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনাটি ভেঙে দেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ভূমিদস্যু সাবের কেশরহাটে অধিকাংশ জমি দখল করে একের পর এক মার্কেট গড়ে তোলেন। বর্তমানে কেশরহাটের সিংহভাগ সরকারি জমি তার দখলে রয়েছে। ভবিষ্যতে কেশরহাটের নাম পরিবর্তিত হয়ে সাবের হাটে রুপান্তর হতে পারে বলে তাদের ধারণা।

হাটের জায়গা দখলে কেউ প্রতিবাদ বা প্রতিবেদন করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। শূন্য থেকে কোটিপতি সাবের আলী ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এবং জোর করে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দিনে দিনে গড়ে চলেছেন অসংখ্য দোকানপাট। এসব করতে গিয়ে সাবের আলী গত ২১ মে দুপুরের পর জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকারও হয়েছেন।

এবিষয়ে কেশরহাট পৌর সাবেক কাউন্সিলর বুলবুল বলেন, কেশরহাটে আমার পরিবারের দখলে থাকা ২২ শতাংশ জমি সাবের কাউন্সিলর সড়ক ও জনপথ হতে জায়গাটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন বলে জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন।

এবিষয়ে কাউন্সিলর সাবের আলীকে মুঠোফোনে সরকারি জমি দখল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  কেশরহাটে আমার জায়গা মানুষে দখল করে খায়। আমি কোন জায়গা দখল করিনি। আমরা হাটের জায়গা কিনে দোকান নির্মাণ করি। এসময় তাকে হাটের সরকারি জায়গা কার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বলেন, রাসেল মার্কেট করবে কেউ বাধা দিলে ফলাফল ভাল হবেনা।

কেশরহাট ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকতা মোঃ ইকবাল কাশেম বলেন, কাউন্সিলর সাবেরের ব্যক্তিগত জায়গা বাদে সড়ক ও জনপথের জায়গাসহ বাজারের অনেক জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন। রাসেলকে আমি স্থাপনা বন্ধে নোটিশ প্রদান করেছি। ইউএনও স্যারের নির্দেশে সরকারি জায়গায় মতিনের যে স্থাপনা গড়েছিল তা ভেঙে দিয়েছি।

এবিষয়ে মুঠোফোনে কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, আমি অবৈধ স্থাপনার পক্ষে নই। আমি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনসহ সড়ক ও জনপথ দপ্তরে অবহিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, হাটে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে আমি পৌর প্রাঙ্গণে গরীব মানুষের সুবিধার্থে কবুতর হাট বসতে দিয়েছি। পৌর কাউন্সিলর সাবেরের সরকারি জমি দখল নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সড়ক ও জনপথের জায়গা নিয়ে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল তা স্থানীয় সংসদের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, ইতিমধ্যেই যেসকল অবৈধ স্থাপনাগুলো আছে তা উচ্ছেদের জন্য চিঠি পেয়েছি এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছি।

জাগরণ/আরকে