• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২২, ০৬:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১, ২০২২, ০৬:১৩ পিএম

ক্লুলেস মামলার রহস্য উন্মোচন করলো র‌্যাব

ক্লুলেস মামলার রহস্য উন্মোচন করলো র‌্যাব

কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের রামু-মরিচ্যা সড়কের পাশ থেকে গত ২৬ ফেরুয়ারী পুলিশের অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা এক কিশোরের মরদেহের ক্লুলেস রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাব। আজ মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব-১৫ এর কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনের কথা জানান র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক খায়রুল আমিন সরকার।

তিনি জানান, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই ১৩ বছরের কিশোর, ইজিবাইক চালক মোঃ ওয়ায়েজকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয় বন্ধু, ইজিবাইক চালক নুরুল ইসলাম ও তার সহযোগী আবু হেনা প্রকাশ হানিফ। নির্মমভাবে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে কিলিং মিশন শেষ করা হয় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই। 

র‌্যাব সূত্র জানায়, এ ঘটনায় সোমবার মধ্যরাত থেকে থেকে মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৪ জনকে আটক করেছে তারা। তাদের মধ্যে একজন মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ইজিবাইক, ৪টি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা জব্দ করে র‌্যাব।

র‌্যাবের ভাষ্য, আটকদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন চকরিয়ার বড় পুকুরিয়া চরনদ্বীপ এলাকার আকতার হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম (২০) ও মহেশখালীর কালারমারছড়া এলাকার আলী আহম্মদের ছেলে আবু হেনা প্রকাশ হানিফ (৩৩)। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আন্তঃজেলা টমটম গাড়ি চোর চক্রের সদস্য রয়েছেন দুই জন। তারা হলেন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার চুনতি এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন (৩৬) ও তার সহযোগী উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২ এর ইউ/ডব্লিউ-৫ ব্লকের আমির হামজার ছেলে মোঃ হোসেন।

সূত্রটি আরও জানায়, ইজিবাইকটি ছিনতাই ও বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার লোভে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বন্ধু নুরুল ইসলাম ও তার সহযোগী আবু হেনা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারী রাতে ওয়ায়েজের ইজিবাইকে করে সমিতিপাড়া থেকে মরিচ্যা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা। এরপর আনুমানিক রাত পৌনে ১১ টার দিকে রামুর খুনিয়াপালং এলাকায় রামু-মরিচ্যা সড়কের পাশে ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে চালক ওয়ায়েজকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইজিবাইকটি ছিনতাই করার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে দু’জন মিলে তাকে মারধর করে এবং, উপযুপরি ছুরিকাঘাত করে। এক পর্যায়ে ওয়ায়েজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাকে পাশের জমিতে ফেলে ইজিবাইক, মোবাইল ও টাকাপয়সা নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়।

খায়রুল আমিন সরকার আরও জানান, হত্যার পর ইজিবাইকটি বিক্রি করার জন্য তারা যোগাযোগ করে আন্তঃজেলা ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের মূলহোতা মোঃ আরিফ হোসেনের সাথে। যিনি বাংলাদেশী হয়েও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করতেন। হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া নুরুল ইসলাম ও আবু হেনা ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি মো. আরিফ হোসেন ও রোহিঙ্গা মোঃ হোসেনের কাছে জমা দিয়ে চলে যায়।

হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া আবু হেনা প্রকাশ হানিফের সাথে কথা বলেছে। আবু হেনা বলেন, ওয়ায়েজকে আমি ধরেছি, ছুরিকাঘাত করেছে নুরুল ইসলাম। আমাকে নুরুল ইসলাম বলেছিল ইজিবাইকটা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। সে ২৫ হাজার নেবে, আমি ২৫ হাজার নেব। 

র‌্যাব কার্যালয় প্রাঙ্গনে উদ্ধার হওয়া ইজিবাইকটি দেখে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ওয়ায়েজের মা সানজিদা ও পিতা জাহাঙ্গীর আলম। কিছুতেই থামছিল না তাদের আহাজারি।

সানজিদা জানান, তাঁর স্বামী মৎস্য শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। করোনাকালে দরিদ্র পিতার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে ইজিবাইক চালানো শুরু করেছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মোঃ ওয়ায়েজ। সেই ইজিবাইক কারনেই অকালে প্রাণ হারাতে হলো তাকে।

হত্যাকান্ডের তিনদিন পর ২৮ ফ্রেব্রুয়ারী অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা করেন ওয়াজেদের পিতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। আবেগাপ্লুত কন্ঠে হত্যাকান্ডে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবী করন তিনিও।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ছেলে লেখাপড়া করতো। তাকে কেন এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? আমি এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসি চাই।