• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২২, ০৪:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৩, ২০২২, ০৪:২৬ পিএম

ঘর নির্মাণ আর বিয়ের স্বপ্ন অধরা রেখেই চলে গেলেন হাদিসুর

ঘর নির্মাণ আর বিয়ের স্বপ্ন অধরা রেখেই চলে গেলেন হাদিসুর

ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন হাদিসুর। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া হাদিসুর চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন। রাশিয়ার চলমান সংকটের মধ্যে বুধবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের ‘এমভি বাংলা সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলা হয়। এ ঘটনায় মারা যায় হাদিসুর।

হাদিসের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ি ভর্তি মানুষ। বাকরুদ্ধ বাবা মাকে শান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। ইউক্রেনে জাহাজটি আটকা পরার পর থেকেই তাদের পরিবারের সকলের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল। নানা শঙ্কার মধ্যে ছিলেন তারা। তাদের সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। সন্তানের মরদেহ ফেরা নিয়ে এখন আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। 

নিহত হাদিসের ছোট ভাই মো. তারেক বলেন, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে ৫ বছর যাবৎ চাকরি করছিলেন হাদিসুর। আমরা জাহাজে থাকা হাদিসুরের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন, মা বেহুঁশ।
তিনি বলেন, বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সময়ে ফোনে বলেন, ভাই আমাদের আর ভাঙ্গা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক ঘরের কাজ ধরবো। ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে হাদিসুর শঙ্কিত ছিল। বাড়ি ফেরার তাড়া অনুভব হয়েছিল তার কথায়। বাড়ি ফিরে কী কী কাজ করবে, তা নিয়ে আলোচনাও করেন।

তারেক আরও বলেন, তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, যাতে দ্রুত তার ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এক নজরের জন্য হলেও আমার ভাইয়ের মরদেহটা শুধু দেখতে চাই। ভাইকে হারিয়ে আমাদের পরিবারটি পথে বসে গেলো। 

হাদিসুরের চাচা বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, নিহত হাদিসুর রহমানের বয়স ৩৩ বছর। পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এবার বাড়ি ফিরলে তাকে বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন দুশ্চিন্তায় আছি হাদিসুরের মরদেহ দেশে কীভাবে আনব। যুদ্ধের কারণে যেখান থেকে জাহাজই বের হতে পারছে না, সেখানে হাদিসুরের মরদেহ নিয়ে আসাটা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।

হাদিসুর রহমানের মৃত্যুর খবর আসার পর পুরো এলাকায় শোক নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই বিচলিত ছিলাম। কারণ হাদিসুর ৫ দিন আগে তার মাকে মোবাইলে জানিয়েছিল, যুদ্ধে আটকা পড়েছে। ফিরে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে সেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হলো। হাদিসুর আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।