• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২২, ০১:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০২২, ০১:৪৮ পিএম

হাওরে চলেছে কৃষকের  হাহাকার

হাওরে চলেছে কৃষকের  হাহাকার

দিরাই প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাওরপাড়ের মানুষ আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে। সীমান্তের ওপার ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি থেকে ফসল বাঁচাতে হাওর এলাকার কৃষক প্রাণপণ চেষ্টা করছে। 

উপজেলাটি হাওর অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে বছরে একটি মাত্র ফসল ফলে। আর এই ফসল ফলাতে হাওরপাড়ের মানুষকে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। সারা বছর অপেক্ষার পর যখন গোলায় ধান তুলবে  কৃষক ঠিক সেই মুহূর্তে একে একে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে সব হাওর। এতে হাওরে হাওরে বেড়ে চলেছে কৃষকের হাহাকার।

অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে রবিবার রাতে দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের সাতবিলা বাঁধ ভেঙে পানি ডুকতে শুরু করে। সোমবার তলিয়ে যায় হুরামন্দির হাওরের আধাপাকা ধান। সাতবিলা বাঁধ ভেঙে ও কামারখালী নদীর তীর উপচে পানি ডুকতে থাকে। এর আগে রবিবার রাতে বাঁধভাঙার খবর শুনে স্থানীয় কৃষক দিশাহারা হয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাঁধ রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। তলিয়ে যায় হাওরের ১১ হাজার হেক্টর বোরো জমির ফসল। 

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সরেজমিন একাধিক স্থানীয় কৃষকের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, হুরামন্দির হাওরে  হাইব্রিড জাতীয় ধান না পাকায় তারা কাটতে পারেনি। এর পরও আধাপাকা ধান প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ কাটা হয়েছে। অনেকেই কাচিও চালাতে পারেননি রবিবার সন্ধ্যায় বাঁধ ভেঙে নিমিষেই তলিয়ে যায় তাদের একমাত্র ফসল। এদিকে কিছু ফসল পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। যা কৃষক পরিবারের পুরুষ মহিলারা মিলে তুলে আনতে রিতিমত হিমসিম খাচ্ছে। 

কৃষকরা বলেন, তাদের অনেকেই হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন, ঠিক তখনই ঢলের পানি সব নিয়ে গেল। 

এদিকে দিরাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয় হুরামন্দির হাওরের প্রায় ৭০ শতাংশ ধানকাটা হয়েছে। এখনও হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে ধানকাটা অব্যাহত আছে।

জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাবলু বলেন, ৪২ নং পিআইসি সাতবিলা বাঁধের আওতায় হুরামন্দির হাওরে ১২ হেক্টর জমির মধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ পাকা আধাপাকা ধানকাটা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। আমার চোখের সামনে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে হাওরে, তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের একমাত্র সোনার ফসল।

এর আগে ১২ দিন পূর্বে ৬ এপ্রিল পাশ্ববর্তি চাপতির হাওরের বৈশাখী বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় ১২ হাজার কৃষকের সাড়ে চার হাজার হেক্টর ফসলি জমি চোখের সামনে সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে হাওর পাড়ের কৃষকের কান্না থামছে না। চাপতির হাওর ডুবে যাওয়ার পরদিন থেকে কমতে শুরু হয় কালনীসহ দিরাইয়ের নদনদীর পানি। এতে ডুবে যাওয়া চাপতির হাওরের কিছু কিছু উঁচু জমির ভাসতে শুরু হয় এবং পাশ্ববর্তী রক্ষিত হাওরের কৃষকগন অনেকটা আশান্বিত হন। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাস অনুযায়ী ১০ এপ্রিল থেকে ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জির অতিবৃষ্টির পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সবকটি নদীতে অতিমাত্রায় পানি বৃদ্ধি পায়। যার কারণে সাতবিলা বাঁধ ভেঙে ও কামারখালী নদীর  তীর উপছে রবিবার রাতে সাড়ে ১০ টার দিকে পানি ডুকে আস্তে আস্তে হাওর তলিয়ে যায়। 

জাগরণ /আরকে