• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০৮:১২ পিএম

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

 

দেশের ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার কারণে দিন দিন বাড়ছে খেলাপি ঋণের বোঝা। সুশাসনের অভাবে, ঋণ অব্যবস্থাপনায় ৫ বছরের ব্যবধানে ঋণ খেলাপি এখন সর্বোচ্চ অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিগত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০১৮ সালে। খেলাপি ঋণের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা সর্বশেষ প্রান্তিকে এমন চিত্র উঠে এসেছে। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা, ওই বছর খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা বা ২৩.৬০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোর সর্বমোট খেলাপি ঋণ হয়েছে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। যা গত ৫ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। 

তবে এক বছরের ব্যবধানে বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এদিকে ২০১৬ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২১.০৩ শতাংশ, ২০১৬ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা বেড়ে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকায় স্থিতি পেয়েছি।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্ঠা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন। সরকারকে দেখতে হবে, ঋণ প্রস্তাব ও অনুমোদনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হচ্ছে কি না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, সরকারকে ভুল বুঝিয়ে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে সবার আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, এসব অর্থ নতুন উদ্যোক্তাদের দিলে বিনিয়োগ বাড়বে। তাতেও কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ব্যাংকের ঋণ প্রদান সক্ষমতা বাড়বে এবং আর্থিক খাতের উন্নয়ন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর ওপর নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে। বিশেষ করে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে হচ্ছে কিনা। এসব বিষয়ে সরকার রাজনৈতিকভাবে বলতে পারে। আইনি জটিলতায় আটকে থাকা অর্থ দ্রুত সমাধানে সরকার বিশেষ আদালত গঠন করতে পারে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ ফেরত দিচ্ছে না, তাদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৯ দশমকি ৯৬ শতাংশ। এই সময় ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়ায় এক লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এক বছর আগে ডিসেম্বর-১৭ শেষে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছিল এক লাখ ৪০ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে সাত হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০১৭ সালের বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল পাঁচ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে ৬৩৮ কোটি বা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে।

আলোচ্য সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ছয় লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৮ হাজার ১৩৯ কোটি টাকাই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট ঋণের পাঁচ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এক বছর আগে ডিসেম্বর'১৭ শেষে বেসরকারি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬০৩ কোটি টাকা এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা যা মোট বিতরণ করা ঋণের চার দশমিক ৮৭ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে আট হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ৯ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ৩৫ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ছয় দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ ছিল দুই হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।

এআই