• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২১, ০৩:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১, ১০:১৫ পিএম

খুবির বহিষ্কৃত শিক্ষকের পক্ষে কয়েকটি যুক্তি

খুবির বহিষ্কৃত শিক্ষকের পক্ষে কয়েকটি যুক্তি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানোর ‘অপরাধে শিক্ষক আবুল ফজলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অন্য দুইজন শিক্ষক শাকিলা আলম ও হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তিনজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত সব কটি অভিযোগ প্রায় অভিন্ন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় শিক্ষক আবুল ফজল মূল ‘অপরাধী’, যাকে বরখাস্ত করা হলো তাই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর সত্য-মিথ্যা জানা গেলে খুব সহজেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পুরো প্রক্রিয়াটির সঠিক-বেঠিক সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। তাই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও সেই অভিযোগগুলোর সত্যতার বিষয়টির আলোচনা আমি একমাত্র শিক্ষক আবুল ফজলকে ধরেই করছি। 

পত্রের শুরুতেই বলা হয়েছে—

উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্র মোতাবেক যেহেতু আপনি জনাব মো. আবুল, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো যাচ্ছে যে, গত ০১-০১-২০২০ ও ০২-০১-২০২০ খ্রি. তারিখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর ঘটনায় আপনার সম্পৃক্ততার বিষয়ে আপনাকে ১৩-১০-২০২০ তারিখে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়।

এখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর বলে আখ্যায়িত করেছে। তার মানে এ কথার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনকে নৈতিকভাবে অস্বীকার করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছিল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তাদের আন্দোলনকেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ন্যায্য বলেছে, তা ইতিমধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে থাকবেন। অর্থাৎ খুবি প্রশাসনের বক্তব্য স্ববিরোধী, একই মুখে তারা দ্বিচারিতা করছেন। বাধ্য হয়ে বলতেই হচ্ছে, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের যে অবস্থাকে বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর বলছে সে অবস্থার বিভিন্ন ভিডিও লোকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছেন এবং সেখানে কোনো বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর অবস্থার নজির পাওয়া যায়নি। একইভাবে শিক্ষক আবুল ফজলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ছয় ও আট নম্বর প্যারায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈরাজ্যকর বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে—

যেহেতু, গত ০১-০১-২০২০ তারিখে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আপনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইন বলেছে যে হলে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, যা ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত আবাসনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে আপনার এই মিথ্যাচার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ করার প্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয়। 

শিক্ষক আবুল ফজল বলেছেন, ‘হলে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদেরকে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ যে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বলছে আবাসনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এ ধরনের কোনো ‘বাধ্যবাধকতা নেই।’ অথচ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯০ (৪৫) এ বলা হয়েছে ‘প্রত্যেক ছাত্র’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্বারা নির্ধারিত স্থানে বাস করবে। তার মানে ‘বাধ্যবাধকতা নেই’ এ কথাটির মাধ্যমে বর্তমান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটির আইনকে অস্বীকার, অমান্য ও অবমাননাই শুধু করেছে তা নয়; সেই সঙ্গে শিক্ষক আবুল ফজলকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর অধিকার বিষয়ে মিথ্যাচার করেছে। 

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে—

যেহেতু, ‘শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লজ্জা পাওয়া উচিত এবং লজ্জায় তাদের আবাসিক সমস্যা সমাধান করা উচিত’ বলে ধারণকৃত ভিডিওতে আপনাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, একটি বা দুইটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলো নির্মাণ সরকার কর্তৃক অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে হয়ে থাকে। কাজেই আপনার বক্তব্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অবমাননাকরই নয়, বরং তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই দেওয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। 
 
দেশের প্রচলিত ব্যবস্থার অজুহাত দিয়ে এখানেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইনকে অস্বীকার ও অবমাননা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নির্মাণ সরকার কর্তৃক অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে হয়ে থাকে কথাটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ব্যবস্থার বিষয়টি অগ্রাহ্য করে ও বিবেচনায় না নিয়ে কর্তৃপক্ষ পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকেই অবজ্ঞা ও অবমাননা করেছে। 

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে—

যেহেতু, বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসহ শিক্ষার্থীদের সব বিষয় ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট একটি প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে। ঘটনাকালীন শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট কোনো দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও, অযাচিতভাবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে আপনি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রশাসনিক কাঠোমোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের দাবিসংশ্লিষ্ট বিষয়টি সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। 

তার মানে শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট কোনো দায়িত্বে না থাকলে কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো যাবে না, শিক্ষার্থীদের কোনো দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান বলছে প্রত্যেক ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আর যখন সমস্যাটা শিক্ষার্থীদের, তখন একজন শিক্ষকই তো সর্বপ্রথম তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। প্রশাসনের দায়িত্বে না থাকলে শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ানো যাবে না, এ ধরনের বক্তব্য প্রশাসনের হীনম্মন্যতা ও অন্তঃসারশূন্য মানসিকতাকেই প্রকাশই শুধু করে না, তা 'শিক্ষক' নামের মর্মার্থকেই চরিতার্থ করে। একই সঙ্গে প্রশাসন অভিযোগ তুলছেন তিনি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এই ‘নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’টাই কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবারের ‘স্বেচ্ছাচার’? যখন ইচ্ছে শিক্ষার্থী বহিষ্কার হওয়া এগুলো ‘নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’য় কীভাবে সম্ভব? 
 
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে—

যেহেতু, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে প্রযোজ্য ফি ও বেতন কাঠামো অনুমোদিত হয় ২০১৪ সালে (১৭৪তম সিন্ডিকেট, ২৩/০৯/২০১৪ খ্রি.)। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন (২২/১২/২০১৬ খ্রি. হতে ১৬/০৭/২০১৮ খ্রি. পর্যন্ত) আপনি সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। আপনি সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দায়িত্বে থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সুবিধা বর্তমান সময়ের চেয়ে অপ্রতুল ছিল। আপনি, জনাব মো. আবুল ফজল, শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও ঐ সময়ের শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা সমাধানকল্পে আপনার কোন ভূমিকা পালনের তথ্য প্রশাসনিক রেকর্ডে নেই। কাজেই, কোন দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও এসব বিষয় নিয়ে ঘটনাকালীন আপনার সোচ্চার ভূমিকা অস্বাভাবিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান হয়। 

সে সময় শিক্ষক আবুল ফজল ছিলেন একজন সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দায়িত্বে। বলা প্রয়োজন এ রকম ১০ জন সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের তিনি একজন ছিলেন। সেখানে কোন বিষয়ে আসলেই তার কতটুকু ভূমিকা রাখার সক্ষমতা রয়েছে? তাছাড়া, মূল দায়িত্বটা ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের। সহকারীগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাকে সহায়তা করেন মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার এ প্রশ্নটা একজন ছাত্রবিষয়ক পরিচালককে করতে পারেন। একজন সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের (১০ জনের ১ জন) কাছে এমন প্রশ্ন রাখা যথেষ্ট অসমীচীন। বলা জরুরি, শিক্ষক আবুল ফজল সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের পদত্যাগ করেছিলেন। হতে পারে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছিলেন না বলে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন কিংবা অন্যান্য সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের সঙ্গে তার মতের অমিল হচ্ছিল, কিংবা এ বিষয়ের প্রধানতম ব্যক্তি অর্থাৎ ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের কাছে তার মতামত প্রাধান্য পাচ্ছিল না কিংবা মতামত বা চিন্তাভাবনায় অমিল ছিল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অন্য যেকোনো অধিকারের সুরক্ষা হচ্ছিল না বলে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। যাহোক, প্রশাসন কর্তৃক এমন লঘুতর একটি প্রশ্নকে সামনে রেখে একজন শিক্ষককে চাকরি থেকে বহিষ্কারের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত কিছুতেই সমীচীন হতে পারে না। 

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে—

যেহেতু, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ডিনরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আপনি আইন স্কুলের সম্মানিত ডিনকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান, যা আপনার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বহিঃপ্রকাশ। 

একজন ডিনকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান ঔদ্ধত্যপূর্ণ হয় কী করে? উল্টো সেটা দ্বারা তো শিক্ষক আবুল ফজলের নৈতিক অবস্থানের সত্যটা ও শুদ্ধতা প্রকাশ পায়। তার প্রকাশ্য এমন উচ্চারণ প্রমাণ করে তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি যৌক্তিক। বিষয়টির মধ্যে ঔদ্ধত্যতার কোনো ছিটেফোঁটাও থাকতে পারে না। 

সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে—

(ষষ্ঠ ও অষ্টম অভিযোগে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমকে ‘নৈরাজ্যকর’ বলে আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে) যেহেতু, আপনাকে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, অথবা লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে, অথবা কমিটি আপনার সুবিধামত স্থানে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে আহ্বান করে এবং কোন মাধ্যমে আপনি ব্যাখ্যা দিতে চান, তা আপনাকে ১০-০১-২০২১ খ্রি. তারিখে একটি পত্র দেওয়া হয়। আপনি কোন মাধ্যমে তার ব্যাখ্যা প্রদান করতে চান, সে সম্পর্কে কমিটিকে কোনো কিছুই জানাননি; বরং ১০-০১-২০২১ খ্রি. তারিখে দেওয়া একটি পত্রে কমিটির প্রাপ্ত তথ্যসূত্রের কাগজপত্রাদি আপনি কমিটির কাছে চান এবং যে ব্যক্তিদের কাছ থেকে কমিটি সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে, তাদের জেরা করার সুযোগ চান। এছাড়া আপনি আপনার পত্রে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ১২ জন শিক্ষকেরই সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য কমিটিকে অনুরোধ জানান। উপরন্তু, আপনি নিজে শিক্ষার্থী না হওয়া সত্ত্বেও, সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে জনৈক শিক্ষার্থী কর্তৃক দায়েরকৃত রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের আচরণ শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ সম্পর্কিত মহামান্য হাইকোর্টের রুলনিশির বিষয় অবতারণা করেন, এবং এই রুলনিশির পরিপ্রেক্ষিতে আপনাকে মৌখিক বা লিখিত বক্তব্য প্রদান করতে হবে কি না, সে বিষয়ে কমিটির কাছে ব্যাখ্যা চান। যা কর্তৃপক্ষের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন ও অবমাননার শামিল। 

প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষক আবুল ফজল কোন মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিতে চায়, সে বিষয়ে নাকি কমিটিকে কিছু জানাননি। কিন্তু বাস্তবতা হলো শিক্ষক আবুল ফজল (অভিযুক্ত অন্য দুইজনও) মেইলে ও লিখিত উভয়ভাবেই তিনি যে লিখিত পত্রের মাধ্যমে জবাব দিতে চান সেটা জানান। তার সত্যটা জানতে নিচের সংযুক্তি দুইটা দেখুন। 
 
যে জেরা করার কথা বলা হয়েছে তার মূল বিষয়টা হলো শিক্ষক আবুল ফজলের অজ্ঞাতে অসাক্ষাতে সাক্ষীগুলো নেওয়া হয়েছে। তাই তিনি তদন্ত কমিটিকে বলেছেন সেসব ব্যক্তি থেকে তার অজ্ঞাতে সাক্ষী নেওয়া হয়েছে তাদের জেরা করার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। তার মানে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নেওয়া হবে, সে সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে, অথচ তিনি তা জানতে, শুনতে, বুঝতে-কিছুই করতে পারবেন না। একইভাবে, শিক্ষক আবুল ফজল তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর ডকুমেন্টগুলো কর্তৃপক্ষের নিকট চান, সেটাও তাকে সরবরাহ করা হয়নি। 

মহামান্য হাইকোর্টের রুলনিশি, যে বিষয়টি সম্পর্কে অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সবাই অবগত, তার আলোকে মৌখিক বা লিখিত বক্তব্য প্রদানের বিষয়ে জানতে চাওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন ও অবাধ্যতার বলে প্রতীয়মান হয়েছে। বলা হচ্ছে ‘আপনি নিজে শিক্ষার্থী না হওয়া সত্ত্বেও’, মহামান্য হাইকোর্টের রুলনিশির বিষয় সম্পর্কে কেন জানতে চাইলেন? প্রশ্ন হলো যার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হচ্ছে, যার একপর্যায়ে শিক্ষকদের সহমত পোষণ করার ঘটনাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অন্যায় বলে গণ্য হয়ে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে গড়ায়, তখন সারা দেশ জানে এমন একটি বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করতে হবে কি না, সেটা জানতে চাওয়া অন্যায় হয় কী করে? নাকি উল্টো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড মহামান্য হাইকোর্টকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করার শামিল? 

উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকেই এটাই প্রতীয়মান হয় যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শিক্ষক আবুল ফজলের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা। শুধু তা-ই নয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে উক্ত অভিযোগগুলো আনতে মিথ্যা, অন্যায় ও হঠকারিতার আশ্রয় নিয়েছে, যা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

 

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়