• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১, ০১:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৫:০৮ পিএম

উচ্চশিক্ষায় যেভাবে বিদেশি ভাষার বই অনুবাদ হতে পারে

উচ্চশিক্ষায় যেভাবে বিদেশি ভাষার বই অনুবাদ হতে পারে

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ভাষা ব্যবহারের অন্তরায় হিসেবে যে কারণটি অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয় তা হচ্ছে, বাংলা ভাষায় পর্যাপ্ত বইয়ের অভাব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যদিও ইংরেজি বই ব্যবহার করেন, কিন্তু পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া ও মূল্যায়নে মূলত বাংলা ভাষাই ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ মূল শিক্ষোপকরণ (বা বই) ইংরেজিতে, বাদ বাকি সবকিছু বাংলায়। এ ক্ষেত্রে মূল পরামর্শটি থাকে, বিদেশি (মূলত ইংরেজি) বইকে বাংলায় অনুবাদ করা।

এই কাজটি কে করবে? বাংলা একাডেমির অনুবাদ নিয়ে একটি শাখা আছে সত্যি, কিন্তু ধরে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বই অনুবাদ করা তাদের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না। অবশ্য বাংলা একাডেমি চাইলে দশ বছরের একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে, যার আওতায় যে কেউ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যবহৃত ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার বই বাংলায় অনুবাদ করতে পারবেন। মান যাচাই সাপেক্ষে একাডেমি সেসব বই প্রকাশ করবে এবং তার আগে, একাডেমি মূল বইয়ের প্রকাশকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করবে।

এর বাইরে মূল ভূমিকাটুকু পালন করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, দুইভাবে। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ কাজে নিজ-শিক্ষকদেরকে যুক্ত করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পদকে ব্যবহার করতে দিতে পারে। ব্যাখ্যা করা যাক।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষকরাই মূলত সম্মুখসারির ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা যেসব কোর্স বা বিষয় পাঠদান করেন, সেগুলোর ওপর নিজেরা বই লিখে যেমন ভূমিকা রাখতে পারেন, তেমনি সংশ্লিষ্ট বই অনুবাদও করতে পারেন। যেহেতু, শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে গবেষণা-প্রবন্ধের মতো বই প্রকাশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেহেতু শিক্ষকরা এই দিকটির প্রতি বেশি মনোযোগ দিলে সহজে এই বাধা দূর করা যায়, কিংবা অনেকটা দূর করা যায়।

অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ও এ-কাজে সুযোগ সৃষ্টি ও প্রণোদনা দিতে পারে দুটো উপায়ে। প্রথমত, প্রভাষক থেকে অধ্যাপক হতে শিক্ষকদের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রকাশনা থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিয়ম করে যে, একজন শিক্ষকের অধ্যাপক হতে অন্তত দুটো মানসম্পন্ন অনূদিত বই থাকতে হবে, তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রচুর অনুবাদ বইয়ের দেখা পাবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব প্রেস ও সংস্থা থেকে (যেমন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রেস) এসব বই প্রকাশ ও বিপণন করা। এতে সহজেই বাইরের প্রকাশকদের কাছ থেকে বই অনুবাদের অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হবে, দাম রাখা যাবে শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে ও শিক্ষকদেরও রয়্যালটি দেওয়া সম্ভব হবে।

এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস জনসাধারণের কাছ থেকে উন্মুক্তভাবে অনুবাদের বই গ্রহণ করে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করতে পারে। পাশাপাশি, দক্ষ অনুবাদককে স্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগদানের মাধ্যমে ফরমায়েশি বই অনুবাদ করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার কারণ যদি বই হয়, তাহলে তা সমাধানের সহজ উপায় রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব নিয়ে কতটুকু ভাবে? আদৌ ভাবে কি?