• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৩:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৭, ২০২১, ০৯:০১ এএম

আর্টের শক্তি

আর্টের শক্তি

১৯৮৫ সালের ঘটনা। লাহোর স্টেডিয়ামে তৈরি মঞ্চে ধীরে ধীরে উঠে এলেন ইকবাল বানো। তাঁর পরনে কালো শাড়ি! এ যেন রবীন্দ্রনাথের ‘পূজারিণী’ কবিতার শ্রীমতী; চরম বুদ্ধ-বিরোধী রাজা অজাতশত্রুর নিষেধ অমান্য করে, মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে যেন স্তুপে অর্ঘ্য সাজাতে চলেছেন।

সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউল হক পাকিস্তানের নারীদের জন্য ‘হিন্দুয়ানি পোশাক’ শাড়ি পরা নিষিদ্ধ করেছিলেন। নিষিদ্ধ করেছেন বিখ্যাত প্রগতিবাদী উর্দু কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের গান বা কবিতার চর্চা। সামরিক শাসকের সেই ফরমানকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ৫০ বছরের এক সাহসী গজলশিল্পী ইকবাল বানো মঞ্চে উঠলেন শাড়ি পরে। তিনি গাইবেন সেই নিষিদ্ধ কবি ফয়েজের গান, যিনি মারা গেছেন এক বছর আগে। হাজার হাজার দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে। দর্শকের উল্লাসধ্বনির মধ্যে ইকবাল বানো গেয়ে উঠলেন—

হাম দেখেঙ্গে, হাম দেখেঙ্গে
লাযিম হ্যায় কি হাম ভি দেখেঙ্গে;
আমরা দেখব, আমরা দেখব
নিশ্চিত জানি, আমরাও দেখব;

এই গান সব স্বৈরাচারির নিশ্চিত পতনের এক সদর্প ঘোষণা। সব দেশের শাসিত-শোষিত মজলুম জনগণের জন্য এক আশা-জাগানিয়া গান। আমাদের চোখের সামনেই স্বৈরাচারের পতন ঘটবে। অত্যাচার নির্মমতার পাহাড় তুলার মতো উড়ে যাবে। শাসকদের মাথার ওপর আকাশে বিজলি চমকাবে। এক পর্যায়ে ইকবাল বানোর চড়া স্বরে যেন শোনা গেল স্লোগানের দৃঢ়তা:

স্‌ব তাজ উছালে জায়েঙ্গে
স্‌ব তখ্‌ত গিরায়ে জায়েঙ্গে
সকল মুকুট ছুড়ে ফেলা হবে
সকল সিংহাসন গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে

৫০ হাজার দর্শকের স্টেডিয়াম উন্মত্ত হয়ে উঠল। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠতে লাগল, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’।

যারা গান বাজনাকে সিরিয়াসলি নেন না তাদের আমি এই গল্পটা সবসময় বলি। গান সিনেমা আর্ট এসবের গুরুত্ব আমরা বুঝি না। বুঝে অটোক্রাট ফ্যাসিস্টরা। তাই তো কিশোর ভাই কার্টুন আঁকার জন্য মাসের পর মাস জেল খাটে। মোশতাক ভাইরা জেলে মারা যায়।