• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২১, ১১:১১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৭, ২০২১, ১১:১৪ এএম

মেয়েদের টেস্ট ম্যাচ ডুমুরের ফুল ধরনের একটা ব্যাপার

মেয়েদের টেস্ট ম্যাচ ডুমুরের ফুল ধরনের একটা ব্যাপার

বাংলাদেশের মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি আজকে (মঙ্গলবার) সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সঙ্গে সেঞ্চুরি করেছে। সংবাদটা নিঃসন্দেহে খুবই আনন্দের এবং অনুপ্রেরণাদায়ী, কারণ নারীরা খেলাধুলায় ভালো করা বাংলাদেশের মতো নারীবিদ্বেষী, অগণিত ট্যাবুর দেশে একটা দারুণ ব্যাপার। 

কিন্তু, এইখানে একটা ঝামেলা আছে। খেলাটা চলতেসে দুইটা ইমার্জিং দলের মধ্যে। এই দুই দলে ইমার্জিং, মানে কম বয়সী ট্যালেন্টেড ক্রিকেটারদের খেলার কথা। কিন্তু, বাংলাদেশ দল গঠন করা হইসে নিগারসহ অলমোস্ট জাতীয় দলের সব খেলোয়াড় দিয়ে। অনেকদিন ধরেই সিনিয়র লেভেলে খেলা খেলোয়াড়রা ইমার্জিং দলে খেলে স্বাগতিকদের জিতায় দিচ্ছে। আমাদের বয়সী বা এর চেয়ে বড়দের এরশাদ আমলের ডানা কাপ, গোথিয়া কাপ মনে থাকার কথা। 

অবশ্য, বিসিবি বলতে পারে যে, কদ্দিন আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া মেয়েরা খেলার এতোই কম সুযোগ পায় যে, ইমার্জিং কেন, পারলে অনূর্ধ্ব- ১২ এর সঙ্গেই নামায়ে দেয়া যায়, ম্যাচ প্র্যাকটিসের জন্য। 

টেস্ট স্ট্যাটাসের আলাপে আসি। গত সপ্তাহে বাংলাদেশকে আইসিসি টেস্ট স্ট্যাটাস দিলো। এই নিয়ে মিডিয়া আর নারীবাদীরা বিরাট খুশী। তলায়ে না দেখলে অবশ্যই খুশী হওয়ার মতো ব্যাপার। বিশাল অর্জন মনে হওয়ার কথা। আদতে, এইটা একটা শুভঙ্করের ফাঁকি! 

কারণ, মেয়েদের টেস্ট ম্যাচ জিনিসটা ডুমুরের ফুল ধরনের একটা ব্যাপার। সেই ১৯৩৪ সালে প্রথম অফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচ হইলেও গত ৮৭ বছরের টেস্ট ম্যাচ হইসে মাত্র ১৪০টা। বছরে গড়ে দুইটাও না।

তাও খেলার সংখ্যা এতোগুলা হইসে মূলত ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া প্রায় বছর একটা করে ম্যাচ খেলে বলে। এই যাবত ইংল্যান্ড ম্যাচ খেলসে ৯৫টা আর অস্ট্রেলিয়া ৭৪টা। এর বাইরে নিউজিল্যান্ড আর ইন্ডিয়াই ১২টার বেশী ম্যাচ খেলসে। 

ইদানিং অবস্থা আরো খারাপ, ২০১৪ সালের পর ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার তিনটা ম্যাচ ছাড়া আর কোন টেস্ট হয় নাই। যেই ইন্ডিয়া টাকাপয়সা আর ক্রেজে সবার চেয়ে আগায়ে, ওরাও গত সাত বছরে কোন টেস্ট খেলে নাই। পাকিস্তান খেলসে তিনটা, আর শ্রীলঙ্কা মোটে একটা, তাও সেটা ১৯৯৪ সালে। 

বাংলাদেশের সঙ্গে ফাও ফাও টেস্ট স্ট্যাটাস পাইসে আফগানিস্তান। এদের নারী দলই হয় না। এশিয়া কাপে একটা পাঠাইসিলো সেখানে আবিষ্কার হইসে ১০ বছরের মেয়ে জাতীয় দলে খেলতেসে। প্লেয়ার নাই, কী করুণ অবস্থা!

এহেন টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে আর বিদেশী বাচ্চা মেয়েদের সঙ্গে সিরিজ জিতেই অবশ্য বিরাট প্রচার হবে। ক্রিকেট আর নারীরা আগায়ে গেছে এহেন বিজয়কেত্তণ করা হবে। 
অ্যাচিভমেন্টভিত্তিক উন্নয়ন, সূচকভিত্তিক উন্নয়নের আত্মশ্লাঘায় যেমনটা করা হয় আরকি। 

এই চিত্র বাংলাদেশের নারী আন্দোলন আর উন্নয়নের গল্পের সঙ্গে বেশ মেলে। বেশ বড় বড় সাইনবোর্ড সর্বস্ব অর্জন। ভেতরটা ফাঁপা। তিন যুগ ধরে দেশে নারীপ্রধানরা শাসন করলেও সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর প্রতি অবস্থান তেমনভাবে পালটায় নাই। পাঠ্যপুস্তকগুলাতে পর্যন্ত এর ইঙ্গিত নাই। নারীবাদী আন্দোলন বলতে হইসে কেবল উচ্চবিত্ত শহরে কিছু সিভিল মুভমেন্ট। অর্জন হইসে নারীদের টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার মতো আছে কিছু সাইনবোর্ড। 

এই সাইনবোর্ডের নিয়ন আলোতেই কিটিবাদীদের উজ্জ্বল চেহারাগুলা ভাসে, নিচে পড়ে থাকা শত শত দরিদ্র নারীরা অন্ধকারেই থেকে যায়।