• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২০, ০৬:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৬, ২০২০, ০৯:৩৪ এএম

স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট

স্বাস্থ্য বিভাগের স্মারকটি আইন পরিপন্থী

স্বাস্থ্য বিভাগের স্মারকটি আইন পরিপন্থী

স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি একটি স্বাধীন পেশা যা শিশু ও ব্যক্তির যোগাযোগ, সামাজিক দক্ষতা, খাদ্য গলাধঃকরণ সংক্রান্ত যেকোন ‍সমস্যা নির্ণয় এবং মূল্যায়ণ মাধ্যমে প্রদানকৃত প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন পদ সৃষ্টির জন্য গত ২৬ অক্টোবর, ২০২০ স্বাস্থ্য পত্র (স্মারক নং ৪৫.১৪৫.০১৫.০০.০০.০১৪.২০১১-৮০৯(১/৭) প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত স্মারকটি আইন পরিপন্থী, পেশার জন্য অত্যন্ত আপত্তিকর এবং জনমানুষের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিস্বরূপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই স্মারকে ‘স্পিচ থেরাপিস্ট’ পদে ন্যূনতম যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে এসএসসি পাশসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট।ডিপ্লোমাধারী আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো একটি বিষয় হল স্মারকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১১ তম গ্রেডে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ‘স্পিচ থেরাপিস্ট’ পদকে, যেটি সমসাময়িক অন্যান্য নীতিমালার সাথেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পেশাজীবি পদবী ও গ্রেডে কঠোরভাবে নিশ্চিত করা না হলে এবং ‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮’ এর ব্যতিক্রম হলে সাধারণ মানুষ স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি পেশা সম্পর্কে বিভ্রান্ত হবেন এবং রোগীরা অপচিকিৎসার শিকার ও প্রকৃত স্পিচ অ্যান্ড থেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন। (সূত্র: বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন- ২০১৮ এর প্রথম তফসিল)।

• সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যা জানা আবশ্যক
একজন সুপ্রশিক্ষিত এবং সুদক্ষ স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট গবেষণা চিকিৎসা পদ্ধতি মাধ্যমে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ও বিভিন্ন ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠিকে যোগাযোগ ও খাদ্যগ্রহণ বিষয়ক সমস্যার চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।

• স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট হবার ন্যূনতম যোগ্যতা
যে ব্যক্তি সরকার স্বীকৃত কোন প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা অনুষদ হতে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি বিষয়ে এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপসহ পাঁচ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব সাইন্স ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি স্নাতক প্রোগ্রামটি সম্পন্ন করবেন, তিনিই স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট হিসেবে প্র্যাক্টিস করতে পারবেন।

• প্রথম কবে ও কোথায় স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি কোর্স শুরু হয়
বাংলাদেশে ২০০৪ সালে ‍সর্বপ্রথম সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পূনর্বাসন কেন্দ্র ‍সিআরপি’র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইন্সটিটিউটে (বিএইচপিআই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপির ওপর এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপসহ পাঁচ বছর মেয়াদী স্নাতক প্রোগ্রামটি শুরু হয়।

• যাদের স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি প্রয়োজন
দেশের একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠি কথা-ভাষা-যোগাযোগ এবং খাদ্য গলাধঃকরণের নানা ‍সমস্যা, প্রতিবন্ধিতা ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে আছে, যাদের জীবনমান উন্নয়নে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি চিকিৎসা ও পূনর্বাসন সেবার কোন বিকল্প নেই।

দেরিতে কথা বলা শিশু, অটিজম, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিন্ড্রোম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার মত জটিল স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, ঠোট ও তালু কাটা, কন্ঠস্বরের বিকৃতি, শিশু ও ব্যক্তির তোতলামো, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া, মটর নিউরন ডিজিস, মানসিক স্বাস্থ্যহানির কারণে, এমনকি বার্ধক্যজনিত কারণে যোগাযোগে সমস্যা ও যেকোন খাদ্য গলাধঃকরণের সমস্যায় আক্রান্ত শিশু ও ব্যক্তি রয়েছে তাদের স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি প্রয়োজন।

কোয়ালিফাইড স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টদের একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন সোসাইটি অব স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টস ( এসএসএলটি) দীর্ঘদিন যাবত পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ অনুসারে ব্যাচেলর অব সাইন্স ইন স্পিচ এন্ড ল্যাগুয়েজ থেরাপি স্নাতক প্রোগ্রামটি সম্পন্নকৃত থেরাপিস্টদের প্রথম শ্রেণির পদ যেন নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হলে সমাজের ‍সর্বস্তরের অটিজমসহ নানা প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত ও এর ঝুঁকিতে থাকা জনসাধারণের জন্য প্রকৃত স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টদের ম্যালপ্রাক্টিসের দৌড়াত্ম কমে আসবে। সোসাইটি অব স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট (এসএসএলটি) বিশ্বাস করে এবং আস্থা রাখে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ এর শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের সুদৃষ্টি ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে এ পেশার প্রকৃত ও ‍সর্বজনীন সেবা নিশ্চিত হবে এবং জনদুর্ভোগ কমবে।

লেখক: সদস্য, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল এবং সভাপতি, সোসাইটি অব স্পিচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টস (এসএসএলটি)