করোনা সংক্রমণে ঘরবন্দি সারাবিশ্ব। শিশুরাও প্রায় গৃহবন্দি। স্কুলের পরিবেশে খেলাধুলা, পড়াশোনার মাঝেই শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। কিন্তু করোনা মহামারিতে স্কুল, বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ। তাদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শিশুদের পায়ে যেন অদৃশ্য এক শেকলে বাঁধা। এই অবস্থায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও পুরোপরি বিকাশ হচ্ছে না। তাদের পৃথিবীটা যেন একটি ঘরের মধ্যেই থেমে গেছে।
লকডাউন শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব পড়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে ডাক্তার এ.টি.এম রফিক উজ্জল।
ডাক্তার এ.টি.এম রফিক বলেন, “করোনা মহামারি মানুষের জীবনে এক নিদারূন দুঃসময়। শিশুদের জন্যেও এটা সত্য। শিশুদের দৈনন্দিন রুটিন সম্পূর্নভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। স্কুল বন্ধ, বাইরে যাবার সুযোগ নেই, মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করতে পারছে না। এই নিদারূন অবস্থায় শিশুরা দিন অতিবাহিত করছে।“
“কিন্তু এ কথা সত্যি যে বাচ্চাদের এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে বাবা মায়ের তথা অভিভাবকদের অনেক সচেতন হতে হবে। দৈনন্দিন রুটিন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত হওয়ার ফলে গৃহবন্দি শিশুরা তাদের বিনোদনের জন্য ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পরছে। যাকে বলা হয় স্ক্রিন অ্যাডিকশন।“
“স্ক্রিন অ্যাডিকশনের ফলে যেখানে একটি শিশু সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা নেটে সময় দিতে পারে সেখানে এর চেয়েও বেশি সময় শিশুরা নেটে ব্যস্ত থাকছে। এই নেট অ্যাডিকশন শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ মূহুর্তে সচেতন না হলে বিশ্ব আরো একটি মহামারি দেখবে যাকে বলা হবে এই স্ক্রিন এডিকশন।“
“শুধু শিশু নয়, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ সবাই এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে পরছেন। নেট নির্ভরশিলতা শিশুর মধ্যে নানা বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন বিরক্তির উদ্রেক, অস্থিরতা, মনযোগের অভাব, নিদ্রাহীনতা, দেরিতে ঘুমতে যাওয়া, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা ইত্যাদি।“
“এর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব হচ্ছে নেটে শিশুরা অনেক আন ফিল্টার্ড বা অপরিশোধিত তত্ত্ব পাচ্ছে। যা শিশুদের মানসিকভাবে পরিপক্ক হওয়ার আগেই তাদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে। তাদের অফুরন্ত সময় অবহেলায় পার করছে। যেটা মহামারি সময় দেওয়া এই লকডাউনের অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব।"