![Daily Jagaran](https://www.dailyjagaran.com/media/common/logo.png)
ভারতীয় সিনেমার প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন, যিনি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছিলেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় কী ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা? এর লক্ষণ কী? প্রতিকার সম্ভব?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন (এনআইএইচ/এনএলএম) বিভাগের পাবমেড সেন্টারের (পিএমসি) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি রোগ।
এই রোগে আক্রান্তরা ঘুমানোর সময় শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়। মূলত শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশের নালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়।
পিএমসির তথ্য বলছে, বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে সবচেয়ে বেশি যা দেখা যায় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসও)।
এ রোগে আক্রান্তদের গলার পেশি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শিথিল হয়ে আসে। এই পেশি মুখগহ্বরের টাকরা, আল জিভ, জিহ্বা ও টনসিলের মত অংশগুলিকে ধরে রাখে। ফলে এ পেশির শিথিল হয়ে গেলে শ্বাস নেয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে আসে ও ঘুমের সময় আচমকা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ২ থেকে ৪ শতাংশ এ সমস্যায় ভোগেন। তাদের মধ্যে মধ্যবয়সীদের সংখ্যাই বেশি।
সশব্দে নাক ডাকা, ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসা, আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা, দিনের বেলায় ঘুমের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা ঘন ঘন মেজাজ বদল এ সমস্যার সাধারণ উপসর্গ।
অতিরিক্ত ওজন, বার্ধক্য, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসনালীর সমস্যা এ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আবার শ্বাসকষ্ট, ধূমপানের অভ্যাস এবং পরিবারে কারও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলেও এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
পলিসমনোগ্রাফি নামের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়। এ পরীক্ষায় ঘুমের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের সক্রিয়তা এবং রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এমনিতে প্রাণ সংহারী নয়। তবে এ রোগের কারণে গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে, যা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে স্লিপ অ্যাপিনিয়া চলতে থাকলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও পাকস্থলির কাজে এর প্রভাব পড়ে।
গবেষণা বলছে, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রজননক্ষম বয়সের নারীদের দ্বিগুণ, তবে ঋতুস্রাবের বয়স পেরিয়ে গেলে নারীদের মধ্যে এ হার বাড়ে।
এ রোগ হলে সার্বিক জীবনযাপনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তবে কিছু নিয়ম মেনে জটিলতা নিয়ন্ত্রণে রাখাও সম্ভব। এর একটি চিকিৎসা হল ঘুমের সময় নিয়মিত বাতাসের চাপ বজায় রাখা, যাতে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে না যায়।
এসএএইচ//