• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০১৯, ০৪:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৩, ২০১৯, ১১:৫৮ পিএম

একাত্তরে ২০ জেলায় গণহত্যা ৫১২১, গণকবর ৫০২টি

একাত্তরে ২০ জেলায় গণহত্যা ৫১২১, গণকবর ৫০২টি
গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের জরিপ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ অন্যরা - ছবি : জাগরণ

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের ২০ জেলায় ৫ হাজার ১২১টি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গণকবরের সংখ্যা ৫০২টি। একেকটি গণহত্যায় ন্যূনতম ৫ জন থেকে ১ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের জরিপে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
 
জরিপে পাওয়া এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির ট্রাস্টি সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। 

‘গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ’ শীর্ষক এই সেমিনারে আরও জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধে ২০ জেলায় বধ্যভূমির সংখ্যা ৪০৪, গণকবর ৫০২ এবং নির্যাতন কেন্দ্র ছিল ৫৪৭টি। জেলাগুলো হলো- নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, কুড়িগ্রাম, পাবনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, ভোলা, খুলনা, গাইবান্ধা, জামালপুর, নড়াইল, পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার, যশোর, লালমনিরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার ও বরিশাল। 

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এই জরিপ নিখুঁত বলে দাবি করা যাবে না। কারণ অনেক গণহত্যা, বধ্যভূমি বা গণকবর আড়ালে চলে গেছে। তখন গণহত্যায় মানুষের সংখ্যা হিসাব করেছি, ঠিক আছে। কিন্তু নিখুঁত হয়নি। গণনায় ভুল থাকার সম্ভাবনাই বেশি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘আমি গণহত্যা দেখেছি অনেকটা পরোক্ষভাবে। কারণ তখন ছোট ছিলাম। স্কুলে পড়তাম। আমার দুই ভাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সেসময়ের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ তা নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। গণকবর থেকে নিজের স্বজন মনে করে মানুষ অন্যের লাশ নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক লাশ নয়, হাড়গোড় শুধু। মাত্র ২০টি জেলার জরিপে এসব সংখ্যা উঠে এসেছে। ৬৪টি জেলা নিয়ে জরিপ করলে পরিস্থিতি আরো কত ভয়াবহ হবে!’

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলে আমরা দুচোখে শুধু বিজয় দেখি। কিন্তু এ বিজয়ের পেছনে কত মানুষের আত্মদান হয়েছে তা দেখি না। গণহত্যার পেছনেও একটা রাজনীতি আছে। জিয়া, খালেদা, নিজামী গণহত্যা নিয়ে সেই রাজনীতিই করেছেন। রাজনীতিতে ছিল পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন। তারা শুধু বিজয়ের কথা বলে, কিন্তু গণহত্যার কথা বলে না। এসব গণহত্যার বিচার হতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে গণহত্যার বিচার হলে আজ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা হত না।’

জরিপ সম্পর্কে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমরা কেবল এসব গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি এবং নির্যাতন নিয়ে সাধারণ জরিপই করিনি, সেইসঙ্গে জিপিএস সার্ভেও করেছি। এটা বাংলাদেশে প্রথম এবং বিশ্বে হলোকাস্টের (জার্মানিতে ইহুদি গণহত্যা) পর দ্বিতীয়। আমরা এটাকে মানচিত্রে এনেছি। আপনারা যদি মানচিত্র দেখেন তাহলে সারাদেশে গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি আর নির্যাতন কেন্দ্র ছাড়া কিছু দেখবেন না।’ 

সেমিনারে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে এ জিপিএস সার্ভে গুগলে অন্তর্ভুক্তি করানোরও দাবি জানান বক্তারা। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনে সরকারকে কাজ করারও দাবি জানানো হয়।

এসজে/ এফসি