• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০১৯, ০৮:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৯:১১ পিএম

জঙ্গিবাদমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন 

জঙ্গিবাদমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন 
স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ জনতার ঢল; ছবি- কাশেম হারুন


জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যয়ে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) নানা আয়োজনে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে উদযাপিত হয় মহান স্বাধীনতা দিবস। পাশাপাশি এদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উঠে আসে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার এবং মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবেই মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। 

মঙ্গলবার প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। দিনটি উপলক্ষে মঙ্গলবার ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তারা কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময়ে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকবৃন্দ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক। পরে বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ বীর শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক খুলে দেওয়ার সাথে সাথে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। এসময় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিএনপি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিভিন্ন হল সমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সমূহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল সমূহ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাসদ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাপ, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গণতন্ত্রী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ ৭১, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।

সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলের নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এর পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম ও মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর পাশাপাশি সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনেও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপনে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সড়কে অলঙ্করণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে উৎসবমুখর পরিবেশে।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।

বিকেলে বঙ্গভবনে বিশেষ সংবর্ধনার আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ আমন্ত্রিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর মিলন মেলায় পরিণত হয়।

এ ছাড়া সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন। 

এদিকে বিকেলে গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ডাক অধিদপ্তরের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

জাহো/আরআই