সেতুর অভাবে থেমে আছে ২২ গ্রামের স্বপ্ন

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০১৯, ০১:০০ পিএম সেতুর অভাবে থেমে আছে ২২ গ্রামের স্বপ্ন
সেতু না থাকায় নদী দিয়েই পাড় হতে হয় কাউন্দিয়াবাসীদের- ছবি: জাগরণ


উন্নয়নের জোয়ারে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখে ২২ গ্রামের মানুষ। স্বপ্নের সেতুর যেন স্বপ্নেই দেখা মিলে, ব্যস্তবে তা কবে রূপ নিবে তা কেউ জানানে না। সময়ের পরিবর্তনে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। তা সত্ত্বেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই অঞ্চলে জনপদে। উৎকণ্ঠা ও হতাশার তুরাগ পাড়ের কাউন্দিয়াবাসীর ভাগ্য বদলের বাঁধাই একটি সেতু ।

রাজধানীর উপকণ্ঠে শিলাঞ্চল সাভার উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের একটি কাউন্দিয়া। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে কাউন্দিয়ার দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার ব্যবধান। চারপাশে পানি বেষ্টিত কাউন্দিয়াবাসীর নাজেহাল অবস্থা আর দুঃখ-দুদর্শায় জীবনযাত্রার মান দিন দিন বিপর্যস্ত হচ্ছে ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাউন্দিয়া ইউনিয়নের চারপাশেই তুরাগ নদের শাখা-উপশাখা দ্বারা বেষ্টিত। পূর্বে মিরপুর, পশ্চিমে তুরাগ নদী, উত্তরে আমিন বাজার ও দক্ষিণে নবাবেরবাগ অবস্থিত। তবে এ সকল অঞ্চলের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। যা বহুবছর ধরে একই ধারায় চলমান রয়েছে ।

গ্রীষ্ম-বর্ষা যাই থাকুক না কেনও নৌকা দিয়েই পার হতে হয় সর্বক্ষণ । সড়ক পথে কাউন্দিয়ার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্ম ক্ষেত্রে জীবন যাপনের মান পিছিয়ে পড়ছে অনেক অংশেই। তাই জীবিকার তাগিদে ও চলাচলের স্বার্থে বাধ্য হয়েই ব্যবহার করছে নৌকা। চাকরি জীবি ও শিক্ষার্থীদের খেয়া ঘাটে  নিত্য দিনই অপেক্ষার পহর শেষে বিরক্তি নিয়ে যোগ দিতে হচ্ছে ক্লাস কিংবা অফিসে ।  

পারা-পার হচ্ছে এলাকাবাসী- ছবি: জাগরণ

তৃক্ততা ও ক্ষোভ নিয়ে বেসরকারি এক অফিসের কর্মকর্তা নাজিম হোসেন প্রতিবেদকে জানান, দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে খেয়া ঘাটে পৌঁচ্ছালে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষা শেষ করে অফিসে পৌঁচ্ছাতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায় বলে জানান তিনি ।

অন্যদিকে কাউন্দিয়া ইউনিয়নে ২২টি গ্রামে ৩টি প্রাথমিক স্কুল ও ১টি মাধ্যমিক স্কুলে রয়েছে। শিক্ষা জীবনে স্কুলের গণ্ডি পেরুলেই ওই ইউনিয়নের বাহিরে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের পরিবারের অসচ্ছলতা ও পরিবারের নানামুখী জটিলতায় স্কুল জীবনেই ইতি ঘটছে।

শিক্ষার আলো থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অনেক সহপাঠীর কথা বলছিলেন খেয়া ঘাটে অপেক্ষারত কলেজ পড়ুয়া আয়েশা। তিনি জানান, কাউন্দিয়া ইউনিয়নে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পড়াশুনার জন্য যাতায়াতের প্রয়োজন হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কলেজের ক্লাসে দেরি, পড়াশুনার প্রতি অমনোযোগী ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তার স্কুলের অনেক সহপাঠী ও সঙ্গী দূরত্বতা এবং সময়ের ব্যবধানের কারণে হারিয়েছে শিক্ষা জীবন। এসময় তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, বর্ষাকাল আর শীতকালের চলাফেরা একই রকম, পাথক্য শুধু আবহাওয়ার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে নাগরিক অধিকার দাবি করে কাউন্দিয়া ইউনিয়নের গৃহবধূ রূপালি আক্তার জানান, একটা সেতুর অভাবে কেউ অসুস্থ হলেও এ্যাম্বুলেন্স আসার অবস্থা নাই। পোয়াতি ও বুড়া লোকজন অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাতে গেলেই বিপদে পড়তে হয়।

এবিষয়ে কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান শান্ত জানান, এলাকার রাস্তায় বিভিন্ন সমস্যা ছিলো। তবে তা বিভিন্ন সময় উন্নয়ন করা হয়েছে। তবে কাউন্দিয়া বাসীর একটি সেতুর দাবি বার বারই করে আসছে বলে জানান তিনি।
 
তবে ঢাকা-১৪ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক জানান, এবার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিলো কাউন্দিয়া বাসীর জন্য সেতু নির্মাণ। মেট্রোরেল লাইনের জন্য সেতুর কাজটি হচ্ছে না। সেতু নির্মাণ হলে কাউন্দিয়া বাসীর অনেক সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান তিনি ।

এলএ/টিএফ