শৃঙ্খলা ফেরাতে বাজেটে ব্যাংক খাতে থাকছে বিশেষ নির্দেশনা 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০১৯, ১০:০৫ এএম শৃঙ্খলা ফেরাতে বাজেটে ব্যাংক খাতে থাকছে বিশেষ নির্দেশনা 

এবারের বাজেটে ব্যাংক মালিকদের জন্য বড় ধরনের কোনো কর সুবিধা থাকছে না। বরং ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বদ্ধপরিকর সরকার। 

নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের জন্য এবারের বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ- ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা। 

তাই ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে এবারের বাজেটে থাকবে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। যা নতুন অর্থমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত বাজেটে নির্বাচনি বছর হওয়ায় অনেকটা ছাড় পেয়েছেন ব্যাংক মালিকরা। বিশেষ করে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছিল। এতে ব্যাংকের মুনাফা হলেও বাস্তবে উপকৃত হননি সাধারণ গ্রাহক। এর জন্য কোনো ক্ষেত্রে চার্জও কমেনি, সুদের হারও কমেনি। এমনকী সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও অমান্য করেছেন অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা। এতে লাভের বদলে ক্ষতিই হয়েছে সরকারের। একদিকে রাজস্ব কমেছে সরকারের, অন্যদিকে উপকৃত হননি গ্রাহকরা। বরং এর পরেই মূলত ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলার অনেক অবনতি ঘটে। বর্তমানে এই অবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই এবারের ব্যাংকিং খাতে ছাড় দিতে রাজি নয় সরকার। অর্থনীতির প্রধান এই খাতকে সুশাসনের আওতায় নিয়ে আসতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, আগামী বাজেটে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে। যারা ব্যাংকিং বোঝেন ও ব্যাংকিং সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে তাদের ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া ব্যাংক খাতের ঋণ খেলাপি কমিয়ে আনতে এরইমধ্যে ভালো ঋণগ্রহিতার বিষয়ে ছাড় দেবে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে যেসব অনিয়ম হচ্ছে তা রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে বলেছেন, যারা ব্যাংকিং বোঝেন এখন থেকে তাদেরকে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে।  

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরাতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের আলোচিত ‘রিফর্ম’গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো কিছু শর্তারোপ করতে হবে। যাতে যে কেউ চাইলেই ব্যাংকের পরিচালক হতে না পারে। সুশাসন নিশ্চিত করতে রাঘব বোয়ালদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। 

জানতে চাইলে সেন্ট্রাল ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, বেশ কয়েকবছর ধরে ব্যাংকিং খাতে যেসব আইন-নীতিমালা রিফর্ম করার কথা সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয়- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়াতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে ব্যাংক খাতকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া নীতিমালায় সুস্পষ্ট থাকতে হবে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সে বিষয়ে যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।  

প্রসঙ্গত, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা এই অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। এ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা রয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এডিপির আকার প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। 

এআই/আরআই