প্রতিবন্ধী নারীদের তৈরী কার্পেট এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০১৯, ০৯:৩৮ এএম প্রতিবন্ধী নারীদের তৈরী কার্পেট এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে
প্রতিবন্ধীদে নারীদের তৈরি কাপের্ট -ছ্বি : জাগরণ

ময়মনসিংহ সদরের শেফালি আক্তার। দুই বছর বয়সে তিনি পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। বাবার মৃত্যুতে এসএসসির বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। ২০০৪ সালে শেফালির ঠাঁই মেলে ময়মনসিংহ প্রতিবন্ধী কমিউনিটি সেন্টারের উইমেনস ক্লাবের কার্পেট কারখানায়। এখানেই তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এরই মধ্যে তিনি ফ্রান্স সফর করেছেন। শেফালি এখন আত্মবিশ্বাসী একজন নারী।

মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই তার সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এই কথাটি আবারো প্রমাণ হলো ময়নসিংহের প্রতিবন্ধী নারীদের মাধ্যমে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তারা আজ স্বাবলম্বী, শুধু তাই নয় অবদান রেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতিতে। হস্তশিল্পের কাজ শিখে ভাগ্য বদলে গেছে ময়মনসিংহের শতাধিক প্রতিবন্ধী নারীর। তাদের তৈরি দৃষ্টিনন্দন পণ্য সামগ্রী স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

ময়মনসিংহ শহরে মোট ১২ জন প্রতিবন্ধী নারীকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করেছিল কার্পেট হাউস। বর্তমানে এই কার্পেট হাউসে কাজ করছেন শতাধিক প্রতিবন্ধী নারী। সরকারি সহায়তায় ওই নারীদের এ সুযোগ করে দিয়েছে ময়মনসিংহের প্রতিবন্ধী কমিউনিটি সেন্টার।

কার্পেট তৈরির জন্য সুতা সাজানো, বুননযন্ত্রে সুতা লাগানো থেকে শুরু করে কার্পেট, শতরঞ্জি তৈরি সবই করছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। বাজারে এই কার্পেটের দাম ৩ থেকে ২০ হাজার টাকা। বিক্রির টাকা জমা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের তহবিলে। সেই টাকা প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে।

প্রতিবন্ধীদের বানানো কার্পেট আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে জাপান, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশে। প্রথমে তারা স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করতেন। ধীরে ধীরে তাদের কাজের পরিধি বেড়েছে। উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় তা বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

সরকারের এনজিও ব্যুরো ও সমাজসেবা অধিদফতর থেকে নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী কমিউনিটি সেন্টার নারীদের কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে নারী ক্লাব। প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাবলম্বী করতে ২০০০ সালে এই মহিলা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সময়ই এখানে কার্পেট ও হস্তশিল্পের কারখানা গড়ে তোলা হয়। অসহায় প্রতিবন্ধী নারীরা কাজ শিখে এখান থেকেই আয়-রোজগার করে থাকেন প্রতিবন্ধীরা। সপ্তাহে এক দিন এই নারীদের পরিবার নিয়ে সভা বসে। সেখানে নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চলে। যারা ঘর থেকে বের হতে পারেন না, তারা ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ পান। তারা সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কাজ ও পড়াশোনা করেন। সকল বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সুন্দর দিনের গল্প বুনে চলেছে এই প্রতিবন্ধী নারীরা, যা অনেকের জন্য উৎসাহের মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ
করতে পারে।

ময়মনসিংহ মহিলা ক্লাবের ইনচার্জ তাহমিনা আক্তার জানান, ফ্রান্সের তেইজি ব্রাদার কমিউনিটির ব্রাদারেরা ১৯৯৭ সালে ময়মনসিংহ প্রতিবন্ধী কমিউনিটি সেন্টার নামে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাবলম্বী করতে ২০০০ সালে এই মহিলা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সময়ই এখানে কার্পেট ও হস্তশিল্পের কারখানা গড়ে তোলা হয়। অসহায় প্রতিবন্ধী নারীরা কাজ শিখে এখান থেকেই আয়-রোজগার করে থাকেন।

তিনি আরও জানান, প্রতিবন্ধী নারীদের হাতে তৈরি দৃষ্টিনন্দন কার্পেট ও অন্য হস্তশিল্প পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন জাপান, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানসহ প্রায় ৮-১০টি দেশে যাচ্ছে।

নারী প্রতিবন্ধীদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তাহমিনা আক্তার জানান, মহিলা ক্লাবের উৎপাদিত আয় দিয়ে প্রতিবন্ধী নারীদের কাজের মজুরি দেয়া যায়। তবে তাদের চিকিৎসা, শিক্ষাসহ অন্য সুযোগসুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সহজ শর্তে এসব প্রতিবন্ধী নারীদের ব্যাংক থেকে এসএমই ঋণের ব্যবস্থা করা জরুরি। এ সময় তিনি প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহযোগিতায় হাত বাড়াতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

একেএস