‘প্রতিশ্রুতি নয়, বকেয়া পাওয়ার পরই কাজে যোগ দেবে পাটকল শ্রমিকরা’

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১৩, ২০১৯, ০৩:১৬ পিএম ‘প্রতিশ্রুতি নয়, বকেয়া পাওয়ার পরই কাজে যোগ দেবে পাটকল শ্রমিকরা’

‘আর কোনও প্রতিশ্রুতি নয়, শ্রমিকরা বকেয়া মজুরি পাওয়ার পরই কাজে যোগদান করবে।’ আগে ছিল কর্মবিরতি এখন শুরু হচ্ছে ধর্মঘট। মঙ্গলবার স্ব স্ব মিলের গেট সভার মধ্য দিয়ে অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা।’ এমনটাই জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ১৩ মার্চ থেকে খুলনা-যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।
  
সোমবার (১৩ মে) অষ্টম দিনের মতো কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে সপ্তম দিনে রোববার কর্মবিরতি, ষষ্ঠ দিনে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিও পালন করেছেন শ্রমিকরা। কিন্তু শ্রমিকরা এ নির্দেশ উপেক্ষা করে কর্মবিরতি ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। 

শ্রমিক নেতারা বলেছেন, সোমবার ভোর ৬টায় নিজ নিজ কর্মস্থলে না গিয়ে পাটকলের শ্রমিকরা আন্দোলনের সপ্তম দিনে এ কর্মসূচি পালন করে। সকাল ১০টায় খালিশপুর ক্রিসেন্ট জুট মিল প্রশাসনিক ভবনের সামনে শ্রমিকরা সমবেত হন। সেখানে এক সমাবেশের আয়োজন করে শ্রমিক নেতারা।

শ্রমিকনেতা মো. মুরাদ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাট খাতকে সব চক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা করে এসেছেন। আগামী দিনেও রক্ষা করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু এ খাতকে অলাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে একটি চক্র সক্রিয়। তারা নানা ছল-ছুতোয় লোকসানের কথা বলে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত করে আসছে। আমরা বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। এতদিন কর্মবিরতিসহ রাজপথ-রেলপথ অবরোধ পালন করেছি। এবার এ দাবিতে লাগাতার ধর্মঘট পালন করব। শ্রমিকরা বকেয়া না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যহত রাখবে। কোন প্রতিশ্রুতিতে শ্রমিকরা আর বিশ্বাস করে না। ঢাকায় গত ৮ মে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের ঘোষণা অনুযায়ী ১৩ মে থেকে সারাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে এ কর্মসূচি একযোগে ধর্মঘটের এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

সিবিএ নেতা সোহরাব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক বান্ধব না হলে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের বন্ধ হওয়া পাটকল চালু করতেন না। বর্তমান পাট খাতকে ধ্বংস করতে ব্যক্তি মালিকানা পক্ষেও একটি চক্র ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুর গড়া এ পাটকল ও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। 

বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) খুলনার আঞ্চলিক লিয়াজো কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ রেখে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। মিলে উৎপাদন না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মিলগুলো। তিনি বলেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। 

পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত  শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশাধ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল, সব মিল সটআপের অনুকূল শ্রমিক-কর্মচারীদের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীকরণসহ ৯ দফা দাবিতে শ্রমিকরা ১৩ মার্চ থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ৭ এপ্রিল বিজেএমসি থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া মজুরি ও বেতন প্রদান ও ১৮ মের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর শ্রমিকরা অবরোধ ও কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে যোগ দেয়। ২৫ এপ্রিল এসে এক সপ্তাহ সময় নেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এরপর ২ মেও মজুরি না দেওয়ায় ৫ মে থেকে মিলে উৎপাদন বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। গত ১১ মে প্রতিটি পাটকলের প্রকল্প প্রধান শ্রমিক নেতাদের চিঠি দিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

কেএসটি