বড়ুয়া-মারমাগ্রী বিতর্ক 

বৌদ্ধ অনুসারী বড়ুয়াদের মধ্যে বাড়ছে উত্তেজনা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১৫, ২০১৯, ০৬:০৬ পিএম বৌদ্ধ অনুসারী বড়ুয়াদের মধ্যে বাড়ছে উত্তেজনা
বান্দরবানের রামজাদি মন্দির - ফাইল ছবি

আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে আমাদের নামের শেষে বড়ুয়া পদবি ব্যবহার করে আসছি, আজ সুকৌশলে দেশের বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার জন্য ‘বড়ুয়া’ পদবি বাদ দিয়ে ‘মারমাগ্রী’ পদবি ব্যবহার করতে বাধ্য করছে, যাতে বড়ুয়াদের কৃষ্টি, কালচার, সামাজিকতা ধ্বংস হয়ে যায়। কথাগুলো বলছিলেন বান্দরবান শহরের বড়ুয়া সম্প্রদায়ের অসিম বড়ুয়া।

জানা গেছে, বান্দরবানের রামজাদি এবং ধাতু জাদী (স্বর্ণ মন্দির) মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ উ পঞ্ঞা জোত মহাথের (উছালা ভান্তে) বড়ুয়া শীর্ষদের মারমাগ্রী পদবি ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন। এর ফলে এই ধর্মীয় গুরুর অনেক ভক্ত ‘বড়ুয়া’র পরিবর্তে মারমাগ্রী পদবি ব্যবহার শুরু করলে বড়ুয়াদের শীর্ষ ধর্মীয় গুরু ড. এফ দীপংকর ভান্তে ও উছালা ভান্তের ভক্তদের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। আর এই কারণে বৌদ্ধ ধর্মীয় দুই নেতার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিরোধ এতটা প্রকাশ্যে যে, যেকোনো সময় বড় ধরণের সংঘাতের আশংঙ্কা করছে দেশের বৌদ্ধ অনুসারীরা।

বান্দরবান সরকারী মহিলা কলেজের প্রভাষক অজয় বড়ুয়া বলেন, আমাদের জাতিসত্বা বিলুপ্ত করার জন্য এটা করা হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মারমাগ্রী হল একটি জাতির নাম। বার্মার ১৩৭টি স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মারমাগ্রী একটি এবং যে সাতটি জাতি নিয়ে মিয়ানমারের আরাকানের রাখাইন সম্প্রদায় গঠিত তার একটিও হল এই মারমাগ্রী জাতি। এর আভিধানিক অর্থ- মারমা + গ্রী = মারমাগ্রী। গ্রী মানে হল বড়। মারমাগ্রী মানে মারমাদের বড় ভাই। মূলত মিয়ানমারকে অনুকরণ করে বাংলাদেশে বড়ুয়াদের পদবি পরিবর্তনের নির্দেশ দেন বলে মনে করছে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতারা।

রাঙামাটির আসামবস্তি বুদ্ধাংকুর বিহারের সভাপতি ডা. সুপ্রিয় বড়ুয়া জানান, পদবি পরিবর্তনের ফলে সামাজিক বিভাজনের কারনে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়বে। তিনি আরো বলেন, সরকার যে বৌদ্ধ পারিবারিক আইন করছে সেটিও বাধার মুখে পড়বে।

আরো জানা যায়, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বৈশালীর বর্জি বংশীয় এক ক্ষত্রিয় রাজপুত্র তার বহু সংখ্যক অনুচর নিয়ে মগধ হতে পালিয়ে বৌদ্ধ রাজার আশ্রয়ে পগাঁর পথে আসাম, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালিতে বসবাস শুরু করে। মগধের বর্জিবংশ সম্ভুত ‘বর্জি’ শব্দ হইতে ‘বড়ুয়া’ শব্দের উৎপত্তি।

বাংলাদেশ বুডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, আড়াইহাজার বছরের ইতিহাস নষ্ট করে আমাদের পদবি পরিবর্তনের কারণে আমরা সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তিনি আরো বলেন, এক ঘরের এক ভাই বড়ুয়া লিখলে, আরেক ভাই মারমাগ্রী লিখলে সম্পত্তি বণ্টনে আইনি জটিলতা তৈরি হবে।

আরো জানা গেছে, বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ৭ লাখ বৌদ্ধ অনুসারী বড়ুয়া সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ অংশ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে বসবাস করে এলেও তারা নামের শেষ অংশে ‘বড়ুয়া’ পদবি ব্যবহার করেন। সম্প্রতিক সময়ে বড়ুয়া পদবির পরিবর্তে তাদের সুকৌশলে মারমাগ্রী ব্যবহারে বাধ্য করছে বলে মনে করছে সম্প্রদায়টি। যার ফলে সমাজে অস্থিরতার পাশাপাশি ব্যাপক সংঘাতের আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে শ্রীমৎ উ পঞ্ঞা জোত মহাথের (উছালা ভান্তে) এর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে বৌদ্ধ অনুসারী চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় গুরুরা মনে করেন, এই ব্যাপারে দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান না হলে দেশে বড় ধরনের আন্দোলনের পাশাপাশি দেশের সম্প্রদায়গুলো থেকে বিলীন হতে পারে বড়ুয়া সম্প্রদায়।

এফসি