দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর দুই কিলোমিটার

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৫, ২০১৯, ১১:৩৫ এএম দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর দুই কিলোমিটার

অবশেষে পদ্মা সেতুতে ১৩তম স্প্যান ৩বি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসানো হয়েছে। শনিবার (২৫ মে) সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ১৩তম এ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ১৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। এর আগে শুক্রবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে এটি রওনা দেয়। ১১টার দিকে স্প্যানটি পিলারের কাছে পৌঁছায়। শুক্রবার সময়স্বল্পতা ও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়নি। 
পরে শনিবার আবহাওয়াসহ খুঁটিনাটি সবকিছু অনুকূলে থাকার কারণে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর ১৩তম এই স্পেনটি সফল ভাবে বসানো সম্ভব হলো। 

পদ্মা সেতুর প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে ১০টি স্প্যান এবং অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে দুটি স্প্যান। সে হিসেবে ৩বি স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসানো একাদশ স্প্যান হবে। এ স্প্যানটি বসানো মাধ্যমে সেতুর মোট ১৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। জাজিরা প্রান্তে সেতুর ১৩৫০ মিটার ও মাওয়া প্রান্তের একটি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী স্প্যান মিলে মোট ৩০০ মিটার এবং সেতুর মাঝ বরাবর একটি স্প্যান অস্থায়ীভাবে বসানোয় সেতুর মোট ১৮০০ মিটার আগেই দৃশ্যমান রয়েছে। তবে, স্প্যানগুলো ভিন্ন ভিন্ন মডিউলে বসানোর কারনে দৃশ্যমান অংশগুলো এক সারিতে নয় বরং, বিচ্ছিন্নভাবে থাকবে। 

এসব তথ্য নিশ্চিত করে পদ্মা সেতুর প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের আরো জানান, এর আগে কয়েক দফায় এই স্প্যানটি বাসানোর তারিখ পরিবর্তন করা হয়। পদ্মা নদীতে নাব্য সংকট এবং ১৪ নম্বর পিলারে লিফটিং হ্যাঙ্গার না বসাতে পারার কারণে স্প্যান ৩-বি পিলারের ওপর বসানোর শিডিউল পেছায় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ।
মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার 'তিয়ান ই' ভাসমান ক্রেন ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রতিটি স্প্যান বহন করে। এরপর বসানো হয় পিলারের ওপর। 

পদ্মা সেতুর প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার 'তিয়ান ই' ভাসমান ক্রেন ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রতিটি স্প্যান বহন করে। এরপর বসানো হয় পিলারের ওপর।
পদ্মা সেতুতে দুই ধরনের স্প্যান বসবে। নদীর মধ্যে থাকা ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) যেগুলো মূলত স্টিলের তৈরি। আর নদীর দুই পাড়ে থাকা ভায়াডাক্টের ওপর ৭টি করে ১৪টি রেলওয়ে স্প্যান এবং আরও ৭টি করে ১৪টি রোডওয়ে স্প্যান বসবে যার প্রতিটি তৈরি হবে ৬টি করে আই-গার্ডার দিয়ে। স্টিলের স্প্যান বা সুপার স্ট্রাকচার বসানো হয়েছে মোট ১২টি। আজ বসলো ১৩ তম স্প্যান। অন্যদিকে রেলওয়ে গার্ডারের স্প্যান বসেছে মাত্র ১টি। তবে রোডওয়ে গার্ডারের কোনও স্প্যান এখনও বসানো হয়নি।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মাসেতুতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এরপর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। ৬ মাস ২৫ দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে জাজিরা প্রান্তের সপ্তম স্প্যান। ২২ মার্চ বসে অষ্টম স্প্যান এবং মাওয়া প্রান্তে গত ১০ এপ্রিল বসে নবম স্প্যান। জাজিরা প্রান্তে মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ২২ এপ্রিল স্থায়ীভাবে বসে দশম স্প্যান। গত ১৭ মে জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারে জে-৩ স্প্যানটি বসানোর কাজ শেষ হয়। এটি ছিল ১২ তম স্প্যান। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান।

কেএসটি