ব্যতিক্রমী বারোমিস ক্যান্টালোপ প্রজাতির বিদেশি ফল চাষে সফলতা পেয়েছেন পাবনার কৃষক আনিসুর রহমান। গতানুগতিক ফসলের পরিবর্তে পরিকল্পিত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চমূল্যের এসব ফসল আবাদে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। স্বল্পজমিতে কম বিনিয়োগে অধিক লাভ হওয়ায় এসব ফসলের চাষ বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে।
পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আনিসুর রহমানের পাঁচ বিঘা জমিতে ছড়িয়ে আছে উজ্জ্বল হলদে রঙের নজরকাড়া গোলাকার এক ধরণের ফল। ফলটির নাম মেলন, মধ্যপ্রাচ্যে পরিচিত সাম্মাম নামে, কোথাও কোথাও হানিডিউও বলা হয়।
মেলন মূলত বাঙ্গি, তরমুজ কিংবা মিষ্টি কুমড়া গোত্রের ফল। দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মত হলেও, সুমিষ্ট, সুস্বাদু এ ফলের স্বাদে রয়েছে ভিন্নতা। এর আদি নিবাস ইউরোপে হলেও চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতেও উৎপাদন হচ্ছে। অনুসন্ধিৎসু কৃষক আনিসুরের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি পাবনার দাপুনিয়াতেও ফলটির সফল আবাদ হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানালেন, বাংলাদেশের বাজারে অপ্রচলিত হলেও মধ্যপ্রাচ্য, চীন, জাপান ও পশ্চিমা দেশগুলোতে এসব ফল খুবই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর, নানা রোগের প্রতিষেধকও বটে। অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে বারোমাস চাষ হয়, লাভের অঙ্কটাও বেশ।
পাবনার টেবুনিয়া বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জে এম আব্দুল আওয়াল জানান, ক্যান্টালোপ প্রজাতির মেলন জাতীয় ফলগুলো আমাদের দেশের বাঙ্গির মত দেখতে হলেও মিষ্টতায় তিনগুণ বেশি। আর বাঙ্গির বাজারজাতকরণের সবচেয়ে বড় সমস্যা ফেটে যাওয়া। তবে, ক্যান্টালোপ প্রজাতির ফলগুলো যতই পেকে যাক, তা ফাটে না। আর পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনেক উপকারী একটি ফল।
আব্দুল আওয়াল আরো জানান, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত বারো মাসই এ ফলগুলো চাষাবাদ করা যায়। মাত্র ৫৫ দিনে ফসল পাওয়া যায়, ফলে সাশ্রয়ীও বটে।
কৃষক আনিসুর রহমান জানান, গত বছর শখের বশে দেড় বিঘা জমিতে বিদেশি প্রজাতির বারোমাসী তরমুজ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তাই এ বছর তরমুজের পাশাপাশি বড় পরিসরে দশবিঘা জমিতে মেলন, রকমেলন ও মাশমেলনের চাষ করেছেন। স্থানীয় বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সুপার শপে ভালো বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি দামে তিনি প্রতিকেজি হলুদ মেলন ১২০ টাকা, রক মেলন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। সব ঠিক থাকলে জমিতে যে ফল রয়েছে, তাতে মৌসুম শেষে সব খরচ বাদে আট থেকে দশ লাখ টাকা লাখ লাভের আশা তার।
আনিসুর জানান, বর্তমান বাজার মূল্যে এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে তের থেকে পনের হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ তা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ বার হাজার টাকা। সেখানে এক বিঘা জমির ক্যান্টালোপ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা।
প্রচলিত ফসলের বাইরে উচ্চমূল্যের এসব ফলের পরিকল্পিত চাষে কৃষকের লাভের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় রপ্তানী সম্ভাবনাও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান বাজার মূল্যে ধানের সঙ্গে লাভের অঙ্কের পার্থক্যটাও বিস্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী, পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী জানান, আমরা উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এসব ফলের বাজার ও চাষাবাদ সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। কেবল ধানের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে, বিকল্প ফসল হিসেবে ক্যান্টালোপের মত উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষক ভালো লাভ পেতে পারে। যদিও দেশের বাজারে অপ্রচলিত, এরপরেও আনিসুরের ভাল লাভ হয়েছে।
একেএস