চট্টগ্রামে ফের পাহাড় ধসের শঙ্কা 

এক যুগে পাহাড় ধসে ৩৭৪ জনের মৃত্যু 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০১৯, ১০:৫১ এএম এক যুগে পাহাড় ধসে ৩৭৪ জনের মৃত্যু 
পাহাড়ধসে প্রাণহানির তালিকা- ছবি: সংগৃহীত

বর্ষা মৌসুম এলেই পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এজন্য প্রতিবছরই বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কারণ গত ১ যুগ থেকে প্রায় প্রতি বছরই ঘটছে একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা। আর সেই ঘটনার বলি হচ্ছে শত শত প্রাণ। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের পাহাড় ধসে প্রাণ গেছে অন্তত ৩৭৪ জনের।

এদিকে বর্ষার শুরুতেই চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ভারি বর্ষণ। আর তাতেই পাহাড়ের উপর বসবাসকারীদের মাঝে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। যদিও বর্ষার আগে প্রতি বছরের মতো এবারো প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের উপর অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে সেসব অভিযান খুব একটা আলোর মুখ দেখেনি।

পাহাড়ধসে প্রাণহানির তালিকা- ছবি: সংগৃহীত

পাহাড়ধসে প্রাণহানির ধারাপাত

গত ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ ৭টি স্থানে পাহাড়ধসে মারা যায় ১২৭ জন। চট্টগ্রামে ওই ঘটনাটি ছিল স্মরণ কালের সবচেয়ে বড় পাহাড় ধসের ঘটনা। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের আকবরশাহের ফিরোজশাহ কলোনিতে মা মেয়েসহ ৪ জন নিহত হন।

এরপর ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামের লালখানবাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে ৪ পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালের ২৬-২৭ জুন চট্টগ্রামে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালে মতিঝর্ণায় দেয়াল ধসে ২ জন মারা যায়। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে ৩জন এবং ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ে মারা যায়। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় প্রাণ হারায় ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের আকবরশাহের ফিরোজশাহ কলোনিতে ৪ জন মারা যায়।

উচ্ছেদ অভিযান

প্রতি বছরই বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তা বাস্তবায়ন হয় না। সম্প্রতি পাহাড় ববস্থাপনা কমিটির সভায় ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড় মালিকদের এক মাসের মধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসন। সেই নির্দেশনার  প্রায় ২ মাস হয়ে গেলেও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ১৭টি পাহাড়ের উপর এবং পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অধিবাসীরা। এরমধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং বাকি ৭টির মালিক- সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, গণপূর্ত ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।

ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত হচ্ছেই না- ছবি: সংগৃহীত

সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন চট্টগ্রাম মহানগরীর এসব পাহাড়ে ৮৩৫ পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। প্রশাসনের নির্দেশে বিভিন্ন সময় নগরীর লালখানবাজার মতিঝর্ণা, পোড়া কলোনি, উত্তর পাহাড়তলীর লেকভিউ আবাসিক এলাকা এবং আমবাগান এলাকার এ কে খানের পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৩০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযানে ওইসব এলাকার ৪১টি বিদ্যুতের অবৈধ মিটার ও একটি ট্রান্সফরমার বিচ্ছিন্ন করা হয়। একটি অবৈধ ট্রান্সফরমার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপে বিচ্ছিন্ন না করে ফিরে আসতে হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে। এছাড়া ওইসব এলাকা থেকে অবৈধভাবে নেয়া গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। 

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিলাম কিন্তু রোজার কারণে অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষা শুরুর আগে কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সভা করে পুনরায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করব।’

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, ‘পাহাড় কাটা বন্ধে নিয়মিত আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। রোজার কারণে অভিযান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ছিল। দ্রুতই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে বাকি বসতি উচ্ছেদের কাজ শুরু করব।’

টিএফ