গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে তিস্তার তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত ৩-৪ দিনের ব্যবধানে উপজেলার হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে হাজারও একর ফসলি জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এক গ্রামের মানুষের সাথে অন্য গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতাও বাড়ছে। ফলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাশাপাশি ভাঙনের মুখে পড়া পরিবারগুলো ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে সবসময়। একদিকে খাবারের অভাব অন্যদিকে রাত্রি যাপনের বন্দোবস্ত না থাকায় মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে বিপন্ন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়ন ছাড়াও বেলকা, চন্ডিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র পানির প্রবাহে একের পর এক নদীর পার ধসে পড়ছে। ছোট ছেলে মেয়েরা সেখানে পানিতে ভেসে আসা সদ্য লাগানো পটলের চাড়া কোটা দিয়ে টেনে নিচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য অবলোকন করছে ঘরবাড়ি ফসল হারানো হতাশাগ্রস্ত শতশত মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন নদীতে ড্রেজিং এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়মিত নজরদারি না থাকার কারণে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা তিস্তা নদীতে পলি জমে তিস্তার মূল নদী একাধিক শাখায় পরিণত হয়েছে। যার ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বাড়ার সাথে সাথে ওইসব শাখা নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলে সবেমাত্র লাগানো পটল, বেগুন, মরিচ,কড়লা, শষা, ঢেড়স, তোষাপাটসহ নানাবিধ ফসলের সমাহার দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সর্বনাশা তিস্তা সেসব ফসল ঘরে তুলতে দিলো না বরং ক্রমাগত উজানের ভাঙনে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি চোখের সামনেই বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে।
এ ব্যাপারে হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি বলেন, তিস্তার তীব্র ভাঙনে চরাঞ্চলবাসী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় নদী ভাঙার কথা নয়। অথচ গত চার মাস থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙন চলছে। যার কারণে হরিপুর ইউনিয়নের হাজারও একর ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, নদীর নিয়মিত ড্রেজিং এবং খনন করা ছাড়া নদী ভাঙন রোধ করা কোন ক্রমে সম্ভব নয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের পুটিমারি গ্রামটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদী ভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। তবে ভাঙন ঠেকাতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং বর্তমান সংকট মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, গত ২ মে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার তিস্তা নদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, তিস্তা নদীকে রক্ষা এবং ভাঙন রোধ করতে হলে নদীর গতিপথ একমুখি করতে হবে। এ ব্যাপারে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি কুড়িগ্রাম হতে নৌ-পথে স্প্রিড বোর্ডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে কাপাসিয়া ইউনিয়নের কছিম বাজার খেয়াঘাটে স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। এসময় নদীর ভাঙন রোধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
কেএসটি