জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন

এরশাদের মৃত্যুতে রংপুরে শোকের ছায়া

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৪:৫৪ পিএম এরশাদের মৃত্যুতে রংপুরে শোকের ছায়া
এরশাদের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন রংপুর জাপার নেতাকর্মীরা - ছবি : জাগরণ

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর সংবাদে দলের দুর্গ রংপুরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। সবার অপেক্ষা কবে আসবে প্রিয় নেতার লাশ, কতক্ষণে শ্রদ্ধা জানাবেন তাকে।

সকাল থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা স্থানীয় সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে উত্তোলন করা হয় জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে নেতাকর্মী-সমর্থক সবাই মুষড়ে পড়েছেন।

এখন প্রিয় নেতার দাফন কোথায়, কখন হবে এ নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে বসে আছেন তারা। তবে স্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতারা আগেই মতোই চাইছেন, তাদের প্রিয় নেতার দাফন যেন রংপুরেই হয়। এ নিয়ে ইতোপূর্বে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলেও ধরেছেন তারা। তারা বলেছেন, রংপুরে তার দাফন সম্পন্ন হলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা যখন-তখন তার কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। আর রংপুরের বাইরে ঢাকায় হলে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন তারা।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, তিনি একজন জাতীয় নেতা, দেশের জাতীয় পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও দেশের বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন দেশের নেতারা তাকে শ্রদ্ধা জানতে পারবেন। কিন্তু রংপুরে দাফন হলে সে সুযোগ পাবেন না অনেকেই। এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদও চাইছেন রংপুরেই তার দাফন হোক।

কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে এরশাদের প্রথম দফা জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল সোমবার (১৫ জুলাই) তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। এরপর তাকে হিমঘরে রাখা হবে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) তার মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে নিয়ে আসা হবে প্রিয় মাতৃভূমি রংপুরে এবং সেদিনই রংপুরের প্রিয় জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এখানে সর্বস্তরের মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।

এরপর হেলিকপ্টারযোগে আবার তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ঢাকার বনানীতে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে শোনা গেলেও নেতাদের কেউ কেউ বলছেন এখনো তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। এ নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। যেহেতু বৃষ্টির মৌসুম, তা সত্ত্বেও রংপুর সিটি মেয়র ও কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা রংপুরের এই ঈদগাহ মাঠে যাতে শান্তি ও সুষ্ঠুভাবে জানাজা সম্পন্ন হয়, সেজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

এদিকে এরশাদের মৃত্যুর সংবাদে শহরের মানুষের চেয়ে শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ আরও বেশি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, পল্লীবন্ধুর মতো এমন দয়ালু এবং ভালো নেতা তারা আর পাবেন না। তিনি রংপুরে এলেই যেসব এলাকায় পায়ে হেঁটে যেতেন, সেসব এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিতেন। তাদের মতে, এমন ভালো নেতা তারা আর পাবেন না।

এদিকে এরশাদের অবর্তমানে দলের অবস্থান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় নেতারা বলছেন, একদিন সবাইকেই যেতে হবে। তিনিও গেছেন। কিন্তু যায়নি তার আদর্শ। যাওয়ার আগে তিনি তার ভাই জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান বানিয়ে গেছেন। তিনিসহ অন্য নেতাদের নির্দেশনাতেই তার আদর্শ বাস্তবায়নে তারা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তার আদর্শকে লালন করে দলকে আরও বেশি সুসংগঠিত করবেন।

উল্লেখ্য, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছাড়ার পর সাতবারের উপনির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর) আসনে সাতবারই নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এরশাদের মৃত্যুর সংবাদটি এখন মানুষের মুখে মুখে। তার মৃত্যুর পর সব শ্রেণির মানুষের মাঝে রংপুরের মানুষ বলে একটা অন্য রকম অনুভূতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

এনআই

আরও সংবাদ