রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯, ০৬:১৮ পিএম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখনো চালু রয়েছে মোবাইল সিম, ইজিলোড বিক্রির দোকান  -  ছবি : জাগরণ

গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পে বাংলাদেশি মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক সীমিত করার নির্দশনা দেয় বিটিসিএল। বিশেষ করে, থ্রিজি ও ফোরজি সংযোগ ক্যাম্প এলাকায় নিস্তেজ করার কথা। কিন্তু বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ও মঙ্গলবার রাতে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের আগের মতো যথারীতি এই সুবিধা ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পগুলোর রোহিঙ্গাদের ইন্টারনেট-সুবিধা দিতে স্থাপিত ‘রবি’র ৯টি ও বাংলালিংকের ১টি টাওয়ার থেকে প্রযুক্তিগত সুবিধা ভোগ করছে রোহিঙ্গারা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে ও আন্তর্জাতিকভাবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আর খবর আদান-প্রদানে গড়ে তুলেছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। তাদের নিয়ন্ত্রিত একাধিক অনলাইন, ইউটিউব, টিভিতে সার্বক্ষণিক রোহিঙ্গাদের খবরও সম্প্রচার করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের রয়েছে অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ, পেজ, হোয়াটঅ্যাপ, ভাইবারসহ আধুনিক প্রযুক্তির যোগাযোগব্যবস্থা। এসব গ্রুপ ও পেজে সার্বক্ষণিক ছবি, ভিডিও, লেখা আপলোড করা হচ্ছে। ফলে যেকোনো ঘটনাই মুহূর্তের মধ্যে সব রোহিঙ্গার হাতে পৌঁছে যায়। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, এনজিওগুলো রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরী, টিনএজদের মোবাইল জার্নালিজমের প্রশিক্ষণ দিয়ে করেছে দক্ষ।

রীতিমতো পোক্ত হাতের কাজ বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে বাংলাদেশ সরকারের তরফে রোহিঙ্গা শিবিরের মোবাইল কানেকশনে কোপ পড়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশিদের সিম বেআইনিভাবে বিক্রি করা হয় রোহিঙ্গাদের মধ্যে। ফলে সরকারি পদক্ষেপ মুখ থুবড়েই পড়ছে।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলারিটি অথরিটি বা বিটিসিএলের নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কীভাবে মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে বৈঠক হয়েছে উখিয়ায়। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরীর অফিসে বৈঠকে ডেকে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গাদের কোনোভাবে সিম, ডাটা, ইজিলোড বিক্রয় না করতে বলে দেন।

ক্যাম্পগুলোর অভ্যন্তরে অসংখ্য রোহিঙ্গার মোবাইল সিম, ইজিলোড বিক্রির দোকান রয়েছে। রয়েছে শত শত মোবাইল ও কম্পিউটারের দোকান। মোবাইল কোম্পানির প্রতিনিধিরা ক্যাম্পের এসব অবৈধ দোকান বন্ধের দাবি জানান। ক্যাম্পগুলোতে আগের মতো রোহিঙ্গাদের পরিচালিত মোবাইল, কম্পিউটার দোকানগুলোতে অবাধে ইজিলোড, ডাটা, বিকাশ লেনদেন চালু রয়েছে।

উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্প, যেখানে ২০টি আশ্রয় ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে রবির ১০টি ও বাংলালিংকের ১টি নেটওয়ার্ক টাওয়ার রয়েছে। যেগুলোর ৯টি ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের সুবিধার্থে স্থাপন করা বলে জানা যায়। ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের প্রায় ৯০ শতাংশ সিম রবি কোম্পানির।

রবি মোবাইল কোম্পানির উখিয়া টেরিটোরি ম্যানেজার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, টাওয়ারগুলো সচল আছে। তবে সোমবার রাত থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থ্রিজি ও ফোরজি সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তাহলে কীভাবে ওসব চলছে তিনি জানাতে পারেননি। রোহিঙ্গাদের অনেককে বাংলাদেশি বিভিন্ন অপারেটরের পাশাপাশি মিয়ানমারের ‘এমপিটি’ সিম ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সের মিটিংয়ে ক্যাম্পগুলোতে সকল মোবাইল ও কম্পিউটার দোকান নিয়ন্ত্রণের জন্য বলা হয়েছে। তা ছাড়া কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার নির্দেশনা অনুযায়ী শিগগিরই ক্যাম্পগুলোতে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হবে। বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ৬-৭টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থ্রিজি ও ফোরজি সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে বলে তিনি জানান।

এনআই

আরও সংবাদ