পদ্মা সেতুতে বসেছে ২৫তম স্প্যান, দৃশ্যমান ৩,৭৫০ মিটার 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০, ০৪:৫৪ পিএম পদ্মা সেতুতে বসেছে ২৫তম স্প্যান, দৃশ্যমান ৩,৭৫০ মিটার 
শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে বসেছে পদ্মা সেতুর ২৫তম স্প্যান - ছবি : জাগরণ

দ্রুত এগিয়ে চলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এরই অংশ হিসেবে শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে বসল পদ্মাসেতুর ২৫তম স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৩ হাজার ৭৫০ মিটার। সব কিছু ঠিকঠাক থাকায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টায় সফলভাবে স্থাপন করা হল পদ্মাসেতুর ২৯ ও ৩০ নম্বর পিলারে ‘৫-ই’ ২৫তম স্প্যানটি। ২৪তম স্প্যান বসানোর ৯ দিনের মাথায় বসল ২৫তম স্প্যান। 

এর আগে সকাল ৯টার দিকে ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি নিয়ে শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর ২৯ ও ৩০ নং পিলারের কাছে রওনা দেয় ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে সেটি সেতুর কাছে গিয়ে পৌঁছে। ভাসমান ক্রেনটি নোঙর করে পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিং এর ওপর। আবহাওয়া ও কারিগরি সমস্যা না থাকায় দুপুরে সফলভাবে স্প্যান বসানো সম্পন্ন হয়।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ পিলার নম্বর  ৩৭ ও ৩৮তে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারিতে স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসে। ২০১৮ সালের ১১ মার্চে স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারে বসে। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে মাসে। ২০১৮ সালের ২৯ জুনে স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে বসে। স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবরে। স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিলে বসে স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারে। ২০১৯ সালের ২৫ মে মাসে বসে স্প্যান ‘৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন মাসে। স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের উপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ২৬ নভেম্বর সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৪-ডি’। ১১ ডিসেম্বর ‘৩-ই’ স্প্যান বসে সেতুর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের উপর। ১৮ ডিসেম্বর ২১ ও ২২ নম্বর পিলারে উপর বসে স্প্যান ‘৪-সি’। ৩১ ডিসেম্বর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৩-এফ’। ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের উপর ‘৬-বি’ স্প্যান বসে। ২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তে ৫ ও ৬ নম্বর পিলারে বসে ‘ওয়ান-ই’ স্প্যান। ২ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারে বসে ‘৬-এ’ স্প্যান। ১১ ফেব্রুয়ারি সেতুর ৩০ ও ৩১ নম্বর পিলারে বসে ‘৫-এফ’ ২৪তম স্প্যান। সর্বশেষ শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সফলভাবে বসানো হল পদ্মাসেতুর ২৯ ও ৩০ নম্বর পিলারে ২৫তম স্প্যান ‘৫-ই’।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের আরো জানান, মুল সেতুর পিয়ার ক্যাপ কংক্রিটিং কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩০ ও ৩১ পিলারের কাজ দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। পিলার নং-১০, ১১, ২৬ এবং ২৭- এ চারটি পিলারের কাজ বাকি আছে। এদের মধ্যে পিলার-১০ এবং ১১ এর কাজ এ মাসেই (ফেব্রুয়ারি) শেষ হবে।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালে সেতুটি খুলে দেয়ার কথা রয়েছে।

এফসি