নির্মাণ কাজ হওয়ার আগেই মুজিব কিল্লার ফাটল

কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২১, ০২:১৬ পিএম নির্মাণ কাজ হওয়ার আগেই মুজিব কিল্লার ফাটল

কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুইটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র (মুজিব কিল্লা) নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ কেন্দ্র দুইটিতে নিম্নমানের উপকরণ ও লবনাক্ত পানি ব্যবহারের অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া মাটি ভরাটের কাজও যথাযথভাবে হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। 

জানা গেছে, উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের মালেক পাড়া ও মগনামা ইউনিয়নের শরৎ ঘোনা এলাকায় আপদকালীন আশ্রয়ণ কেন্দ্র (মুজিব কিল্লা) নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে যথাক্রমে ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৪৯ টাকা ও ২ কোটি ৮ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৪৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পান পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন কাজলের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজল এন্ড ব্রাদার্স। ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া এ প্রকল্প দুটির নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখনো এর ৭০ শতাংশ কাজ বাকী রয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়ার উজানটিয়ার মালেক পাড়া ও মগনামার শরৎ ঘোনা এলাকার নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ভবনগুলোর তলায় যথাযথভাবে মাটি ভরাট করা হয়নি। নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট ও ময়লাযুক্ত বালু। ইট, পাথর ও খোয়া ভেজানোর জন্য তৈরী করা হয়নি আলাদা চৌবাচ্চা। প্রতি প্রকল্পে আলাদা নলকূপ স্থাপনের নির্দেশনা না মেনে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে লবনাক্ত পানি। নির্মাণাধীন ভবনের মূল স্তম্ভ বসানো হয়েছে সদ্য ভরাটকৃত মাটির ওপর। যার ভিত্তিতে নেই গভীরতা। কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রকল্পের লে-আউট দেওয়ার পূর্বে সরবরাহকৃত নমুনা সাইন বোর্ড আকারে প্রকল্প স্থানে স্থাপন করার কথা উল্লেখ থাকলেও তা দেখা যায়নি। তাছাড়া প্রকল্প অফিস ও শ্রমিক শেড স্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি।

উজানটিয়া ইউনিয়নের মালেক পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা নেওয়াজ সিকদার বলেন, প্রকল্পের কার্যাদেশ মতে ঢালাই কাজে স্টিল শাটার ব্যবহার করা হচ্ছে না। নির্মাণ কাজে দায়িত্বশীল প্রকৌশলী কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হলেও আমরা তা দেখিনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ঠিকাদার নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে ৬০-৭০ লক্ষ টাকা দুর্নীতি করা হচ্ছে। এতে ভেস্তে যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সুরক্ষায় সরকারের এ বিশাল উদ্যোগ।

মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনা এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনায় নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা যেনতেন কাজ করে যাচ্ছেন। প্রকল্পের কার্যাদেশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ তদারকির জন্য একজন প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কোন প্রকৌশলী নিয়োগ দেননি। তাছাড়া প্রকল্পের নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল পরীক্ষার জন্য একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু প্রকল্পের কাজে ওই প্রকৌশলীকে কখনো দেখা যায়নি। নির্মাণের শুরুতেই গ্রেড বীমে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার জয়নাল আবেদীন কাজল অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ প্রকল্পে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল বলেন, কক্সবাজার থেকে পেকুয়া গিয়ে আমি নিয়মিত প্রকল্প কাজ তদারকি করছি। ঠিকাদারকে কোন অনিয়মের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ কেন্দ্র দুটির নির্মাণ কাজ আমি নিবিড়ভাবে তদারকি করছি। তারপরও অনিয়মের অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখা হবে।

জাগরণ/এমআর