কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করলেন তথ্যমন্ত্রী

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯, ০৪:০৪ পিএম কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করলেন তথ্যমন্ত্রী
কলকাতায় ২য় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করলেন তথ্যমন্ত্রী -ফাইল ছবি

 

বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যম চলচ্চিত্রকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে কলকাতায় ২য়বারের মতো ৪দিন ব্যাপী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত শেখ হাসিনার সরকারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেবার পর এটিই ড. হাছানের প্রথম বিদেশ সফর। 

১৫ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতার নন্দন চলচ্চিত্র কেন্দ্রের ২ নম্বর প্রেক্ষাগৃহে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ এপর্যায়ে উন্নীত হতো না। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ ও দুই-বাংলার চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ও ভারতীয় সেনাদের দেয়া রক্তে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পানি আজো লাল। কোনো ষড়যন্ত্রই দু’দেশের এ মেলবন্ধনের প্রতি হুমকি হতে পারেনা। 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চলচ্চিত্র মাধ্যমটি মানুষকে সবচেয়ে বেশি কাছে টানে, মানুষের মাঝে আবেগ সঞ্চার করে, তাকে ভাবতে শেখায়। বাংলাদেশ ও ভারতে দু’দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।

বিজাতীয় আগ্রাসন মোকাবিলা করে বাঙালি সংস্কৃতিকে বুকে ধরে রাখতে দুই বাংলা একসঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র বিশ্বের সকল জাতিসত্তা আজ বিশ্বায়ন মোকাবিলার চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন মোকাবিলা করে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, নীতি-নৈতিকতা বুকে ধারণ করার চ্যালেঞ্জ জয়ে কোনো ছাড় নয়। আমরা পাশ্চাত্যকে জানবো, নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করবো, অনুকরণ নয়।'

বাঙালিরা আদি থেকেই সমৃদ্ধ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘ইউরোপের বাইরে প্রথম নোবেল বিজয়ী বাঙালি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিক্ষাগুরু অতীশ দীপঙ্কর ও গাছের প্রাণ ও বেতার তরঙ্গের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু উভয়েই ঢাকার অদূরে বিক্রমপুরের সন্তান। আমরা ছোটবেলা থেকে যেমন উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা দেখে আসছি, তেমনি পাশাপাশি রহমান-শবনম, রাজ্জাক-কবরীর সিনেমাও দেখেছি।

উল্লেখ্য গত বছর জানুয়ারিতে কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব সূচনা করেছিলেন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

চলচ্চিত্র উৎসবের কর্মব্যবস্থাপনা সংস্থা অনার্য করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিক রহমান জানান, ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি কোলকাতার নন্দন কেন্দ্র ও নজরুল তীর্থে বাংলাদেশের ২৩ টি সিনেমা প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান-উল-আলম,  প্রখ্যাত ভারতীয় সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী,  চলচ্চিত্রশিল্পী প্রসেনজিৎ, কোয়েল মল্লিক, গার্গী রায়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালক লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ, ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নিজামুল কবীর, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মো. মোফাখখারুল ইকবাল, চলচ্চিত্র উৎসবের কর্মব্যবস্থাপনা সংস্থা অনার্য করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিক রহমান ও উপদেষ্টা সুনীত কুমার পালধিসহ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। 

এবারের উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে, পুত্র, আমাদের বঙ্গবন্ধু,  পোস্টমাস্টার ৭১, স্বপ্নজাল, দহন, রাজনীতি, হেডমাস্টার,  জীবনঢুলি, নেকাববরের মজাপ্রয়াণ, ঘেটুপুত্র কমলা, নূরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার, গহীন বালুচর, আলফা, জান্নাত, জন্মভূমি, রাজপুত্র, পাঠশালা, সনাতন গল্প, মহুয়া সুন্দরী, জাগে প্রাণ পতাকায় জাতীয় সংগীতে, খাঁচা, গেরিলা ও চিত্রা নদীর পাড়ে। 

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্যমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করেন। চলচ্চিত্র উৎসবের পাশাপাশি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়া সাঁকোর বাড়ি ও শান্তি নিকেতন পরিদর্শন শেষে সোমবার সকালে তার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।

এসজে/এএস