সারাদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০১৯, ০৮:৪৯ এএম সারাদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান
বুয়েট ক্যাম্পাস

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসসহ সারাদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বুয়েট ছাড়াও ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের রাজনৈতিক কার্যালয় উচ্ছেদ, অনিবন্ধিত অবৈধ ছাত্র অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।


এদিকে বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর থেকে সারাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে থাকা সকল রাজনৈতিক অস্থায়ী কার্যালয় উচ্ছেদ এবং কক্ষগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের মত কঠিন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। আবার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত অছাত্রদের চলে যেতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বুয়েট ক্যাম্পাসের শেরে বাংলা হলে শিক্ষার্থী ফাহাদ খুনের পর থেকে

যতদিন আবাসিক হলগুলোতে অবৈধ ও বহিরাগতরা অবস্থান করবে ততদিন উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি ভর্তি পরীক্ষার পর একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।


তিনি বলেন, ছাত্রদের দাবিগুলো আমরা মেনে নিয়েছি। তাদের সঙ্গে প্রয়োজনে আবার আলোচনা করব। আমরা চাই ভর্তি পরীক্ষার পর একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়, সেই চেষ্টা থাকবে। আশা করি শিক্ষার্থীরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। ভিসি বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা সেন্সিটিভ ইস্যু। তারপরেও শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে হবে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাই বুয়েটে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পেয়েছি। ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে।

ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার নিরাপত্তার স্বার্থেই পরীক্ষার্থীদের হলে থাকতে দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান বুয়েটের উপাচার্য। হলে হলে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে জানিয়ে ভিসি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছি। যতদিন পর্যন্ত অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের উচ্ছেদ করা না যাবে ততদিন এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

অপরদিকে রাজধানীর ঢাকা কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

সম্প্রতি অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলেজের আবাসিক হলগুলোতে অনিবন্ধিত ও অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রাবাসে অবস্থানকারী ছাত্রদের জানানো যাচ্ছে যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে নিম্নোক্ত নির্দেশনাবলী মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো-

যাদের বৈধ আবাসিকতা নেই তারা ছাত্রাবাসসমূহে অবস্থান করতে পারবে না। কোনো অছাত্র ছাত্রাবাসে অবস্থান করবে না। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তারা ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে পারবে না।

বৈধ আবাসিক ছাত্রদের নাম, বিষয়, শিক্ষাবর্ষ ও শ্রেণি উল্লেখসহ বিভাগে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তালিকাভুক্তির বাইরে কোনো ছাত্র ছাত্রাবাসে অবস্থান করার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সমস্যায় পড়লে কলেজ বা ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ কোনো দায় বহন করবে না।এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, যারা অবৈধভাবে হলে বসবাস করছে তাদের হলে থাকার কোনো সুযোগ নেই। নির্দেশনার পরও যারা হল ত্যাগ করবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।


অপরদিকে বুয়েটে ফাহাদ হত্যার পর শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে অছাত্র এবং বহিরাগত ক্যাডারদের চলে যেতে নোটিশ দেয়া হযেছে। পাশাপাশি হলে রাজনৈতিক অফিস উচ্ছেদ করা হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকাণ্ডে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।


এদিকে হলে অভিযান চালিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ও বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক এবং আহসান উল্লাহ হলে ছাত্রলীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত রুম সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। বুয়েটের হলে অবৈধভাবে অবস্থানকারী ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

তিনি বলেছেন, সব প্রভোস্টরা শনিবার থেকে অবৈধদের উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছেন। প্রায় ৯০ ভাগ ছাত্র যারা অবৈধভাবে ছিলেন তাদের সিটগুলো ফাঁকা হয়েছে। বাকিগুলোও ফাঁকা হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, গতকাল হলের কয়েকটি রুম সিলগালা করা হয়েছে। হলগুলোতে বৈধ ছাত্রদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, এরপর কেউ হলে থাকলে সে অবৈধ। ৯ টার্ম একজন ছাত্র হলে থাকতে পারেন। আর পোস্ট গ্রাজুয়েটদের জন্য একটি হল রয়েছে, সেখানে চার টার্ম থাকা যায়। প্রভোস্ট অনুমতি দিলে ছয় টার্ম পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন।'

বুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিচালক বলেন, হলগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে গত দুইদিনে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। তদন্তও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরে আসবে।

এইচ এম/বিএস

আরও সংবাদ