একান্নতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২১, ০২:৪৮ পিএম একান্নতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পা দিল ৫১ বছরে। সুবর্ণজয়ন্তীর এই গৌরবময় দিনে পৌঁছাতে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পার করতে হয়েছে নানা চড়াই-উতরাই।

ঢাকার অদূরে সাভারে প্রায় ৭০০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৭০ সালে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই যাত্রা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১২ জানুযারিতে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ রাখা হয়। 

সূচনালগ্নে ৪টি বিভাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। 

১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্যের দায়িত্ব পান রসায়নবিদ অধ্যাপক ড. মফিজ উদ্দিন। বর্তমানে দেশের প্রথম নারী উপার্চায হিসেবে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। শুরু থেকেই অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে নানা উৎসব পালনে শীর্ষে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে প্রথম পুতুলনাচের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার জন্য পুতুল নাট্য গবেষণা কেন্দ্র খোলা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া বছরজুড়ে কখনো চলে হিম উৎসব, কখনো চৈত্রসংক্রান্তি আবার কখনো ব্যাঙের বিয়ে। এছাড়া পয়লা বৈশাখসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালিত হয় এখানে। 

নৈসর্গিক সৌন্দর্য এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে রয়েছে নানা স্থাপনা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার, ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য অমর একুশ, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নামে নির্মিত মুক্তমঞ্চসহ আরো কিছু স্থাপনা। এ ছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দ ওয়াজিদ আলী গবেষণাগারটি অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণেই। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সৌন্দর্য হলো প্রাকৃতিক জলাধার ও অতিথি পাখি। এখানে ছোট-বড় ১৬টি জলাধার রয়েছে, যেখানে শীতকালে মেলা বসায় অতিথি পাখি।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয়েছেন দেশের গুণী মানুষেরা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করেছেন লেখক হায়াৎ মামুদ, লেখক হুমায়ুন আজাদ, ইতিহাসবিদ বজলুর রহমান খান, নাট্যকার সেলিম আল দীন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরীসহ আরো অনেকে। 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সব সফলতার সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতাও রয়েছে। আবসন সংকট ও গবেষণার মান নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও হলগুলোতে রয়েছে সিট সংকট। বর্তমান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে নতুন ৬টি হলসহ আরো কিছু স্থাপনার কাজ করা হবে। এতে করে আবাসিক সংকটের সমাধান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।